দিনাজপুরে উন্নত জাতের শিম চাষ করে কৃষকদের বাজিমাত

দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে ‘আর্লি-৪৫’ উন্নত জাতের শিম চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। মৌসুমের আগেই এই শিম বাজারে বিক্রি করতে পেরে অধিক মূল্য পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় শীতকালীন এই সবজি এখন গ্রীষ্মকালেই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
বিরল উপজেলার ফারাক্কাবাঁধ গ্রামের কৃষক মো. খাদেমুল ইসলাম (৪০) তার ৩০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে সফল হয়েছেন। তার জমি সবুজ শিমে ছেয়ে গেছে এবং অধিক ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশি।
বিরল উপজেলার মোখলেসপুর গ্রামের কৃষক মো. সায়েদ আলী (৫০) টেকসই কৃষি উন্নয়ন কৃষক-কৃষানি দলের সহায়তায় তার ৩৫ শতাংশ জমিতে এই শিম চাষ করেছেন। তার ক্ষেত সাদা ও বেগুনি শিমের ফুল এবং সবুজ শিমে ভরে উঠেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রায় ২৭ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন।
কৃষক সায়েদ আলী জানান, পাইকাররা জমি থেকেই ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে শিম কিনে নিয়ে যাচ্ছে। খুচরা বাজারে সেই শিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের কৃষক মো. রবিউল ইসলাম (৩৫) জানান, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় কোনো বালাই ছাড়াই শিমের ভালো ফলন পাচ্ছেন। তার সফলতা দেখে অনেকেই শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষকরা বলছেন, আর্লি-৪৫ জাতের এই শিম কম খরচে বেশি লাভ এনে দিচ্ছে। এটি গ্রীষ্মকালীন চাষের উপযোগী এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৭ থেকে ৮ টন পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও ফসল) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় শীতকালীন সবজি শিম এখন গ্রীষ্মকালে বাণিজ্যিকভাবে সব উপজেলাতে কৃষকেরা চাষ করছেন এবং বেশি দাম পাওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের মুখপাত্র উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, কৃষি সমৃদ্ধ জেলা দিনাজপুর বরাবরই কৃষিতে সাফল্য অর্জন করে আসছে। এবার বাজিমাত করেছে গ্রীষ্মকালীন শিম উৎপাদন করে। আর্লি-৪৫ জাতের এই শিম বিষমুক্ত ও পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকায় কৃষকেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন যা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জুন-জুলাই মাসে এই শিমের বীজ রোপণ করা হয়। ভিটামিন সি, ক্যালসিয়ামসহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই শিম চাষে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, স্বল্প সময়ে বিষমুক্ত নিরাপদ এই শিম চাষের সাফল্য আগামীতে অন্য চাষিদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।