নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মিঠা পান

উত্তরের জেলা নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া মিঠা জাতের সুস্বাদু পানের উৎপাদন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেশ ভালো হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি বন্ধ থাকায় উৎপাদিত পানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। বর্তমানে পানের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার পানচাষী সাদ্দাম হোসেন দুই বছর আগে নওগাঁ সদরের শালুকা গ্রামে ৫ বিঘা জমি ৬ বছরের জন্য বন্ধক নিয়ে পান চাষ শুরু করেন। জমি বন্ধক, চারা রোপণ ও মাচা তৈরি সহ তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। রোপণের ৬ মাস পর থেকে পান উঠানো শুরু হয় এবং বর্তমানে তিনি প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টাকার পান বিক্রি করছেন।
পানচাষী সাদ্দাম হোসেন ও বাদল হোসেন জানান, বর্তমানে প্রতি বিড়া (৮০টি পান) পান প্রকারভেদে মাত্র ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক বছর আগেও এই পান ২০০ টাকা বিড়া দরে বিক্রি হতো। চাষীদের অভিযোগ, রপ্তানি বন্ধ থাকায় দাম কমে যাওয়ায় সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিক খরচ তোলার পর লাভের পরিমাণ খুবই কম থাকছে। তারা আশা করছেন, আগামী দেড় মাস পর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। বছর শেষে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তারা।
পান শ্রমিক আকাশ আহমেদ জানান, বরজে পান উঠানো, মাচা মেরামত ও পানি সেচসহ বিভিন্ন কাজ করতে ৮-১০ জন শ্রমিক দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি পান। সাধারণত রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার অভিজ্ঞ শ্রমিকরা এই কাজগুলো করে থাকেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খলিলুর রহমান জানান, বাঙালির আতিথেয়তায় অপরিহার্য এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত পান চাষে নওগাঁর চাষীরা ধান চাষের পাশাপাশি আগ্রহী হচ্ছেন। পান চাষে পরিশ্রম ও খরচ কম হওয়ায় এবং একবার রোপণে দীর্ঘ সময় ফলন পাওয়ায় পান চাষের পরিধি বাড়ছে। পান চাষের জন্য উঁচু, বেলে-দোআঁশ মাটি ও ছায়াযুক্ত জায়গা উপযুক্ত। নওগাঁ সদর, মান্দা, বদলগাছী ও সাপাহার উপজেলায় উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
খলিলুর রহমান জানান, জেলায় ৪৩ হেক্টর জমিতে মিঠা ও সাচি জাতের পানের আবাদ হয়েছে, যা থেকে বছরে প্রায় ৫২৬ টন পান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।