লাখপতির গল্প
থ্রি-পিস দিয়ে শুরু, এখন শাড়ি, মাসে বিক্রি দেড় লাখ

ধৈর্য, পরিশ্রম, দৃঢ় মানসিকতা ও নিয়মানুবর্তিতা—এই গুণগুলো নিয়ে পথচলা শুরু মনিকা আহমেদের। মিলেছে সুফলও। অনলাইনে শাড়ি-থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে এখন বেশ ভালো আয় তাঁর। এখন মাসে গড়ে দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয় তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে।
সম্প্রতি মনিকা আহমেদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় এনটিভি অনলাইনের। কুশল জানতেই এ উদ্যোক্তার উত্তর, ‘আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। বর্তমানে ব্যস্ত আছি ঈদের কাজ নিয়ে। কারণ, ঈদ সন্নিকটে। আমি রমজানের আগেই আমার সব প্রোডাক্ট রেডি করে ফেলি; তাই এখন অনেক বেশি ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।’
মনিকার উদ্যোগের নাম ‘কন্যাসুন্দরী’। তিনি ঢাকায় থাকেন। আর উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন প্রায় চার বছর। তাঁর শুরুর গল্পটা এমন, ‘আমি প্রথমে কাজ শুরু করেছিলাম দেশি থ্রি-পিস নিয়ে। একটা সময় পর অফলাইনে শপ নেওয়াকে কেন্দ্র করে আমি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হই। এরপর অনেক দিন বসে ছিলাম এবং ভেবেছিলাম ব্যবসাটা ছেড়ে দেব। কিন্তু অনেক চিন্তা-ভাবনা করে মনে হলো, এই জায়গাটা আমার খুব ভালোলাগা ও ভালোবাসার জায়গা। আমি কখনওই এই কাজ ছাড়তে পারব না।এরপর থ্রি-পিসের কাজ বাদ দিয়ে নতুনভাবে শুরু করলাম, দেশি তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ। প্রথম প্রথম তাঁতের শাড়ি নিয়ে অল্প পরিসরে কাজ শুরু করলেও এখন আমার কাজের পরিধি বেড়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার নিজস্ব ডিজাইনে কাজ করি। এ কারণে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ।’

ই-কমার্স নারী উদ্যোক্তা হতে পেরে গর্ববোধ করেন মনিকা। তাঁর কাজের মাধ্যমে তাঁতি ও ব্লকের কারিগরেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর তাঁতশিল্পে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছেন বলে মনে করেন এ উদ্যোক্তা।
মনিকা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার কাপড় ডিজাইনের প্রতি এক ধরনের নেশা ছিল। আমার কাপড়ের ডিজাইনগুলো আমি নিজেই করতাম। আর তখন থেকেই মনে হতো বড় হয়ে আমি বুটিকস আইটেম নিয়ে কাজ করব। কিন্তু পড়াশোনা করা অবস্থায় বিয়ে হয়ে যাওয়ায় চাকরি কিংবা ব্যবসা কোনওটাই করা হয়নি। যখন আমার বাচ্চারা একটু বড় হলো, তখন মাঝে মাঝে ফেসবুকে ঢুকলেই দেখতাম, অনেক নারী ফেসবুকের মাধ্যমে পেজ খুলে ব্যবসা করছে। তখন আমার মনে হলো, আমিও তো সংসার-বাচ্চা সামলানোর পাশাপাশি অনলাইনে ছোট করে ব্যবসার কাজ শুরু করতে পারি। অনুপ্রেরণা আসলে পরিবার থেকে পাইনি। পেয়েছি অন্য নারীদের কাছ থেকে, যাদের সে সময়টাতে ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে ব্যবসা করতে দেখেছি।’
তবে মনিকার জীবনে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) ফেসবুক গ্রুপের অবদান অনেক। তাঁর ভাষ্যে, ‘নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম উই। উই নিয়ে বলতে গেলে ছোট্ট করে উই-এর সঙ্গে আমার জার্নিটা শেয়ার করতে হবে। আমি উই-এ জয়েন করি ২০১৯ সালের ১৮ জুন। উই-এ জয়েন করার পরই আমি ই-ক্যাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ স্যার, যিনি উই-এর একজন অ্যাডভাইজার হিসেবে আছেন, তাঁকে পেয়েছি। স্যার সেই সময়টাতে উই-এ সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছেন দেশীয় পণ্যের এই প্ল্যাটফর্মকে দাঁড় করাতে। মূলত স্যারকে দেখেই আমি খুব ভালোভাবে উই-এ অ্যাকটিভ হওয়া শুরু করি। উই-এ জয়েন করার আগে আমি ব্যবসা শুরু করলেও একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে আমার পুনর্জন্ম হয় উই-এ এসে। ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব জেনেছি রাজিব স্যারের কাছ থেকে। এই প্ল্যাটফর্মে উদ্যোক্তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করছেন। কাউকে এক টাকাও দিতে হয় না। তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তারাও উই-এ এসে পরিচিতির পাশাপাশি সফলভাবে ব্যবসা করছেন। উই আসলেই দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম। নাসিমা আক্তার নিশা আপুকেও এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপু উই গ্রুপটা তৈরি করেছিলেন বলেই এখন হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা তাঁদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারছেন।’

মনিকা আহমেদ মূলত তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ করেন। তাঁর মূল ফোকাস তাঁতের শাড়ি। পাশাপাশি তাঁতের ওড়না, তাঁতের তৈরি পর্দা, থ্রি-পিস নিয়েও কাজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৫ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছেন।
মনিকা জানান, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে। তবে এই তিন উৎসবের মধ্যে ঈদে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। তাই ঈদকে সামনে রেখে পরিকল্পনাগুলো একটু অন্যরকম হয়। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময়কার শাড়ির রং এবং ডিজাইনগুলো কিছুটা ব্যতিক্রমী করার চেষ্টা করেন তিনি। রঙের প্রাধান্যটা সব সময় বেশি দেন তাঁতের শাড়িতে।
একজন উদ্যোক্তার আবশ্যকীয় তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনিকা আহমেদ। তা হলো—ধৈর্য, পরিশ্রম করার মানসিকতা ও নিয়মিত থাকা। এই তিন গুণের সমন্বয় ঘটলে সাফল্য আসবে বলে মত তাঁর। যা হোক, এখন মাসে দেড় লাখ টাকার মতো পণ্য বিক্রি হয় মনিকার।
মনিকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, তাঁতে তৈরি তাঁর ডিজাইনের শাড়িগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি করা। কারণ, তাঁর তাঁতের শাড়ির চাহিদা বাড়লে তাঁতিরাও আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, তাঁতপণ্য বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাঁতের শাড়ি সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করতে চান তিনি।