ছয়বারের ব্যর্থতায় কমছে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা

আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাকালে টানা ছয়বার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এতে সপ্তমবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমছে। আসছে অর্থবছরে এর হার দশমিক ২ শতাংশ কমিয়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশে নামানো হচ্ছে।
urgentPhoto
অনেকের মতে, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকে এবারই সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থান থেকে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমলেও কার্পণ্য নেই বাজেটের আকার নিয়ে।
চলে যাওয়া অর্থবছরের (২০১৪-১৫) চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে আসছে অর্থবছরের বাজেটের ব্যয়। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে না পারার হতাশায় বাড়িয়ে চলেছেন সরকারি বিনিয়োগ। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা অর্থ বাড়িয়ে বাড়িয়ে বাজেট দিয়ে যাচ্ছি। আর বাস্তবায়নেও ৯৫-১০০-এর মধ্যে আছি। এত রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৫১ অর্জন করলাম। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব বলে মনে করছি।’
বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ছে প্রায় ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। নিয়ন্ত্রিত সামষ্টিক অর্থনীতির কারণে কিছুটা স্বস্তিতে থাকা অর্থমন্ত্রী আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করতে যাচ্ছেন প্রায় তিন লাখ ১০০ কোটি টাকার বাজেট।
আর বাজেট ব্যয়ের এই অর্থসংস্থানে রাজস্ব আয়ের বিশাল এক লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঁধে। আসন্ন বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করতে হবে আগামী অর্থবছরে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। আমাদের এনবিআরের শক্তিশালী হয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি এনবিআরকে রাজস্ব সংগ্রহের যে টার্গেট আমরা দিয়েছি, তা অর্জন করতে পারবে। আর তা ছাড়া আমরা চাপিয়ে দেইনি।’
এবার বাজেটে ব্যয়ের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে। বর্ধিত বেতন কাঠামোর জন্য এবার ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে মোট খরচ হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি ও সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণটাও বেশ বড়। বাজেটের ঘাটতিও বিশাল। ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৮৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৩০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা এবং বাকি ৫৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা আসবে ব্যাংকঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে।
এম এ মান্নান বলেন, ‘বাজেট ঘাটতির অর্থায়ন আসবে বিদেশ থেকে। আর এর বড় অঙ্কের তহবিল রয়েছে। সেটা এখনো আমরা ব্যবহার হরতে পারিনি। এটা অভ্যন্তরীণ দক্ষতার কারণে হয়ে উঠেছে না। এ ছাড়া আমরা গত অর্থবছরে ব্যাংক থেকে তো টাকা নেইনি। এবার দরকার হলে নেব। টাকা ছেপে করব না। আমরা টাকা এনে অভ্যন্তরীণ বাজেটটাকে রেশনালাইজড করে এখান থেকে ওখানে নিয়ে এটা মেক-আপের চেষ্টা করব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাতভিত্তিক বরাদ্দের দিক থেকে বাজেটে এবার গুরুত্ব পাচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা এবং যোগাযোগ ও পরিবহন খাত।