গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, শিল্পে সংকটের শঙ্কা

গ্যাসের বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আগামী মার্চ ও জুন মাসে দুই দফায় বাড়ছে এর দাম। গ্যাসের দাম বাড়ার এ সিদ্ধান্ত শিল্পে সংকট সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
আজ বৃহস্পতিবার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বিইআরসিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ১ মার্চ থেকে দিতে হবে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। আগামী ১ জুন থেকে দিতে হবে ১৭ টাকা ৪ পয়সা। বর্তমানে দিতে হয় ১১ টাকা ৩৬ পয়সা।
অন্যদিকে ক্যাপটিভ পাওয়ারে (কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট) প্রথম দফায় ৬২ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা, সার কারখানায় ৬ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৬৪ পয়সা, শিল্প কারখানায় ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৭ টাকা ২৪ পয়সা, চা বাগানে ৪৮ পয়সা বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৩ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়েছে, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ৩ টাকা বাড়িয়ে ৩৮ টাকা করা হয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী মার্চ মাসে।
আগামী জুন মাসে ক্যাপটিভ পাওয়ারে দিতে হবে ৯ টাকা ৬২ পয়সা, সার কারখানায় ২ টাকা ৭১ পয়সা, শিল্প কারখানায় ৭ টাকা ৭৬ পয়সা, চা-বাগানে ৭ টাকা ৪২ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিএনজির জন্য দিতে হবে ৪০ টাকা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকার কেন গ্যাসের দাম বাড়াল সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের ব্যবসা এমনিতে খুব খারাপ অবস্থায় আছে।’
বিজিএমইএর সভাপতি আরো বলেন, ‘পোশাক খাতে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর গ্যাসের এ সংকটের কারণে নতুন বিনিয়োগ তেমন একটা বাড়ছে না। তার ওপর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। বিদেশি বায়ারদের দেওয়া নিয়ম মানতে গিয়ে আমাদের বিনিয়োগ ব্যয়সহ পণ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।’
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই করছি। ওই জায়গায় সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আমাদের ওপর নতুন আরেকটা বোঝা চাপিয়ে দিল।’
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহসভাপতি মাহবুবুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিল্পের স্বার্থে ক্যাপটিভ গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। আমরা বিশ্ব অর্থনীতির সূচকে অনেকটা পিছিয়ে আছি।’
মাহবুবুল আলম আরো বলেন, ‘গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি না করে দাম বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে। আমরা আগে থেকে বলে আসছি যেন নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো না হয়।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম সামসুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দেশে জ্বালানি সংকটের কারণে এমনিতে বিনিয়োগ স্থবির অবস্থায় আছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্প খাত দাঁড়াচ্ছিল সেটাও গ্যাস সংকটের কারণে স্থবির অবস্থায় আছে।’
অধ্যাপক ড. এম সামসুল আলম আরো বলেন, ‘সার্বিকভাবে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের যে নীতি ও কৌশল, তাতে জ্বালানি খাত বিপন্ন অবস্থায় আছে। মূল্যবৃদ্ধিতে এ খাত আরো বেশি সংকটের মধ্যে পড়বে।’
পাইপলাইনের মাধ্যমে ব্যবহৃত গ্যাসের চুলার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সামসুল আলম বলেন, ‘বাসা-বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ ঠিকমতো হচ্ছে না। কিছু কিছু জায়গায় নামমাত্র সরবরাহ হচ্ছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অবিচার।’