প্রস্তাবিত নীতি বাস্তবায়ন হলে টেলিকমের নিরাপত্তাসহ কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে

প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্স সংস্কার নীতি ২০২৫ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইসিএক্স অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ আইসিএক্স অপারেটরস অফ বাংলাদেশ (এআইওবি)। এসময় সংগঠনটি জানান, এই নীতি বাস্তবায়ন হলে দেশের টেলিকম অবকাঠামো, জাতীয় নিরাপত্তা, ডিজিটাল সার্বভৌমত্বসহ হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এআইওবির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা। টিআইওবির প্রেসিডেন্ট ও এআইওবির পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এআইওবির জেনারেল সেক্রেটারি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আমিনুর রহমান, এআইওবির কোষাধ্যক্ষ ও জীবনধারা সলিউশন লিমিটেড গ্রুপ সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. খুরশিদ আলম, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আহমেদ উর রহমান (রোমেল)।
ভয়েস ট্রাফিকের জন্য কেন্দ্রীয় আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা হিসেবে আইসিএক্স গত প্রায় দেড় দশক ধরে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও দেশীয় বিনিয়োগ সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল অবকাঠামো গড়ে তুলেছে জানিয়ে সংগঠনের নেতারা সম্মেলনে বলেন, ভয়েস স্তরে সরলীকরণের নামে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং জাতীয় নিরাপত্তা, আয়কর রাজস্ব, দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভবিষ্যৎ এবং সাধারণ গ্রাহকের কল সেবার মান-তিনটি ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে অবৈধ ভিওআইপি, কল রেট বৃদ্ধি ও কল ড্রপের সমস্যা আইসিএক্স নয়, মোবাইলফোন অপারেটরদের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক কাঠামো ও বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে হচ্ছে।
তারা বলেন, এই খাতে অতি সাম্প্রতিক টেকনোলজির উন্নয়নের জন্য ১৩০ কোটি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে আগামী এক দশক সেবা দেওয়ার মতো সক্ষম। সেই সাথে এই খাতে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০০ জনের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালে বিটিআরসির নির্দেশনায় আইপি টেকনোলজি উন্নয়ন ও এসএমএস ইন্টারকানেকশনের জন্য ১৩০ কোটি টাকার দেশীয় বিনিয়োগ হয়েছে। এটি তুলে দিলে কর্মসংস্থানের ওপর বড় আঘাত আসবে। পাশাপাশি এই খাতের বিনিয়োগ থমকে যাবে।
বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, টেলিকম খাতে যেকোনো সংস্কার বাস্তব পরিস্থিতি ও অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে হয়। আমাদের দাবি, বর্তমান আইসিএক্স-ভিত্তিক ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন এবং সুশৃঙ্খল করতে হলে তা করা হোক, তবে এটি বাতিল করে পুরো সেক্টরকে নৈরাজ্যে ঠেলে দেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। দেশে বর্তমানে ৫০টির বেশি ভয়েস সেবাদাতা সংস্থা রয়েছে। যদি দ্বিপাক্ষিক সংযোগের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বড় অপারেটরদের একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হবে। এতে তাদের দাপটে ছোট অপারেটররা টিকতে পারবে না। এছাড়া সরকারি রাজস্ব আদায় কম, আন্তর্জাতিক কলের নিরাপত্তা হুমকি ও অবৈধ ভিওআইপি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এআইওবির জেনারেল সেক্রেটারি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আমিনুর রহমান লিখিত এক চিঠিতে জানান, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত বহুবছর ধরে আইএলডিটিএস পলিসির ভিত্তিতে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই নীতিমালা দেশীয় অবকাঠামো, কোম্পানি ও হাজার হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান আইএলডিটিএস নীতিমালা বাতিল না করে বরং সময়োপযোগী সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক, দেশীয় প্রতিষ্ঠানবান্ধব ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নীতিমালা প্রণয়নই হবে দেশের স্বার্থে যথার্থ পদক্ষেপ।
আমরা বিটিআরসি ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানাই, দেশের টেলিকম খাতের স্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থান ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব স্টেকহোল্ডারের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি বাস্তবভিত্তিক ও দায়বদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।