নয় বছরেও অসমাপ্ত ডিএসইর নিজস্ব ভবন

নির্মাণকাজ শুরুর নয় বছরেও নিজস্ব ভবনে অফিস স্থানান্তর করতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। ২০০৭ সালের মার্চে রাজধানীর নিকুঞ্জে এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১০ সালের ৩১ মার্চ কাজ শেষ করার কথা ছিল, যা এখনো অসমাপ্ত রয়েছে।
নিকুঞ্জে এই ভবনে ডিএসইর দাপ্তরিক কাজ শুরু করতে আরো এক বছর সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০১২ সালে নতুন ভবনে কার্যালয় স্থানান্তরের কথা থাকলেও এখনো ভবন উদ্বোধন করতে পারেনি ডিএসই কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামোর কাজ অনেকটা শেষ হলেও ভবনের অভ্যন্তরীণ নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে ২০১৬ সাল শেষে নতুন ভবনে দাপ্তরিক কাজ শুরু করা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ২১ নম্বর রোডের ৪৬ নম্বর প্লটে এক একর ৩৩ শতাংশ জায়গায় ডিএসইর নিজস্ব ভবন নির্মাণ হচ্ছে। শেয়ারবাজার সম্প্রসারণ করতে ও কাজে গতি আনতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে ডিএসইর ভবন নির্মাণে নিকুঞ্জে এই জমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। ওই বছরই রাজউকের কাছ থেকে জমি বুঝে নেয় ডিএসই।
নকশা অনুযায়ী, ভবনের আয়তন সাত লাখ ৪১ হাজার ১০৯ বর্গফুট। ভূগর্ভস্থ তিনতলা কার পার্কিংয়ের স্থান বাদে মূল ভবন হবে ১৩ তলা। এর প্রথম দুই তলায় থাকবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সাব-স্টেশন, লবি, মিডিয়া সেন্টারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। চতুর্থ তলা ডিএসইর অফিসের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। পঞ্চম তলা থেকে ১১ তলায় ব্রোকারেজ হাউস ও শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থাকবে। অডিটরিয়ামের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ তলার কিছু অংশ ও ১৩ তলা। ভবনে ওঠা-নামায় যাত্রীবাহী লিফটের সঙ্গে থাকবে একটি কার্গো লিফট।
২০০৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ। ওই বছর ২৮ মার্চ ডিএসইর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর ভবন নির্মাণ, স্থাপত্য ও প্রকৌশল কাজের জন্য জিবিবি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১০ সালের ৩১ মার্চে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে মোট কাজের ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষে ব্যর্থ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে ২০১০ সালের ১৫ জুলাই জিবিবি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ডিএসই। এর পর ভবন নির্মাণ কমিটি পুনঃদরপত্র আহ্বান করে। আটটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে খুশলি নির্মাতা লিমিটেড, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) ও রেজা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর এনডিইকে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর বারবার ঘোষণা দিয়েও এখন পর্যন্ত ভবনে স্থানান্তর হতে পারেনি ডিএসই।
নিকুঞ্জে ওই ভবনে নবম তলার দেয়ালে সম্প্রতি প্লাস্টার করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন ফ্লোরে বিদ্যুৎ সংযোগ, স্যানিটারির কাজ চলছে। আবার কোনো কোনো ফ্লোরে ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও ডেকোরেশনের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
গতকাল শনিবার ভবনের অভ্যন্তরে কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রি আবুল কালাম ও বিল্লাল হোসেন। তাঁরা বলেন, ‘যে হারে কাজ চলছে, তাতে পুরো ভবনের কাজ শেষ হতে আরো ১৫-১৮ মাস সময় লাগতে পারে।’
ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘২০১৬ সালের শেষ নাগাদ ডিএসইর নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে লিফট-জেনারেটর চলে এসেছে। প্লাস্টার ও ইলেকট্রিকের কাজ চলছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ শেষ হলেই দাপ্তরিক কাজ শুরু হবে। এর আগে ডিএসইর আইটি বিভাগসহ আরো কয়েকটি বিভাগকে ওই ভবনে শিফট করতে হবে।’
নির্মাণকাজে ধীরগতি থাকার কারণ ব্যাখ্যায় শাকিল রিজভী বলেন, ‘এটা বড় একটি প্রকল্প। তার মধ্যে নীতিনির্ধারক ও কমিটি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে কাজ বন্ধ ছিল। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এখন কোনো সমস্যা নেই, শুধু অপেক্ষা।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিকুঞ্জে এই নতুন ভবনের অফিস স্পেস ডিএসইর পর্ষদ ছাড়াও আড়াইশ সদস্যের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। বরাদ্দকৃত স্পেসের মধ্যে প্রথম দিকে এক হাজার ও ৫০০ বর্গফুট জায়গার জন্য মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। ৫০০ বর্গফুটের জন্য এক লাখ টাকা বুকিং নেওয়া হয়। তবে ৫০০ বর্গফুটের অতিরিক্ত জায়গার জন্য সাড়ে সাত লাখ টাকা বুকিং নেওয়া হয়। এর বেশি মাপের জায়গা নিতে আনুপাতিক হারে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। জায়গা বরাদ্দের কিস্তির অর্থ ও ডিএসইর নিজস্ব তহবিল থেকে জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ বাবদ অর্থায়ন করা হয়।
ডিএসইর পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘নিকুঞ্জে ডিএসইর ভবন চালু করতে কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কমতি নেই। স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম নতুন ভবনে চালু করতে চাইলে ভবন নির্মাণ ছাড়াও কিছু কাজ রয়েছে। কবে নাগাদ অফিস স্থানান্তর হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’
ডিএসইর নিজস্ব ভবনের কাজ গত নয় বছরেও শেষ না হওয়ায় বরাদ্দকৃত জায়গার মালিকরা বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। অনেকে বলেন, ঋণ করে শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ করা হলেও এখনো জায়গা বুঝে পাওয়া যায়নি।
খুরশিদ সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নতুন ভবনের স্পেস বরাদ্দের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১২ সালের পর থেকে ভবন উদ্বোধন করা হবে বলে শুনছি। কিন্তু কবে হবে, তা জানা নেই।’
নিকুঞ্জে ডিএসইর ভবন রাজধানীর একপাশে। আর বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিলপাড়া রাজধানীর আরেক অংশে। এ বিষয়ে আনিসুর মনে করেন, ডিএসইর কার্যক্রম নিকুঞ্জে চললেও মতিঝিলেই চলবে শেয়ার-লেনদেন সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।