পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল ব্যবহারে আগ্রহ কম ব্যবসায়ীদের
সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের ওপর চাপ কমাতে ১৫০ কোটি ডলার খরচ করে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ নৌটার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও বন্দরটি ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
টেক্সটাইল খাতের ৪০ শতাংশ পণ্য পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীরণ এই টার্মিনাল ব্যবহারের নিয়ম করা হলেও কার্যকর হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বন্দর ব্যবহারে তাদের খরচও বেশি। তবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আশা, কাস্টমস সমস্যার সমাধান হলে এই বন্দর ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন ব্যবসায়ীরা।
একসময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বুড়িগঙ্গা নদী ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। কিন্তু ক্রমেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সংযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কপথ। দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য আসে ঢাকায়। আর ঢাকামুখী পণ্যের ৫০ শতাংশ কনটেইনার আসে সড়কপথে এবং ১১ শতাংশ আসে রেলওয়ের মাধ্যমে। পণ্য পরিবহনে নৌপথকে জোর দিতে ২০১৩ সালে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু খুব একটা সাড়া না মেলায় চলতি মাস থেকে টেক্সটাইল খাতের ৪০ শতাংশ পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে অপর্যাপ্ত কাস্টমস সুবিধার পাশাপাশি বন্দরের অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘পানগাঁওতে যদি ৪০ শতাংশ পণ্য আসে তাহলে তা খালাস করার মতো অবস্থা নেই।’ এখানে এখনো পণ্য আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়নি বলে তিনি মনে করেন।
নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যাঁরা আমদানিকারক, তাঁরা এখনো আগ্রহী হয়ে ওঠেননি। যখন তারা সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন, বুঝবেন এটা লাভজনক; তখন থেকে এটা ব্যবহার করবেন।’
হরতাল-অবরোধে সড়কপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা যানজটের বিবেচনায় নৌপথ ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রাধিকার পেলেও পরিবহন খরচের হিসাবে খুব একটা বিবেচনায় আনা হচ্ছে না পানগাঁও বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও বন্দরের মাধ্যমে রাজধানীতে ২০ ফুটের একটি কনটেইনার পরিবহনে খরচ হয় ২০৪ মার্কিন ডলার। অথচ একই পণ্য রেলপথে আনতে ব্যবসায়ীদের খরচ হচ্ছে ৭৮ ডলার। সড়কপথে খরচ হয় ১৫০ ডলার। জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বাড়ানো গেলে সংকট কাটবে বলে মনে করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী।
শাজাহান খান বলেন, ‘আসলে আমাদের জাহাজ তো প্রচুর পরিমাণে নেই। আর সব কিছুর জন্য একটু সময় লাগবে।’
ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, ‘পর্যাপ্ত ট্রান্সপোর্ট নেই। আমাদের ভাড়া অনেক লাগে। আমরা সবাই এ ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
টেক্সটাইল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে যখন আমরা আমাদের কারখানা পর্যন্ত পণ্য আনি, পরিবহন খরচ পড়ে ১৫-১৬ হাজার টাকা। কিন্তু এখানে ট্রাক ভাড়া চায় ২৫ হাজার টাকা। আর অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছে।’
বর্তমানে কনটেইনার পরিবহনে এই নৌপথে চারটি জাহাজ চলাচল করছে। পানগাঁও অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল উদ্বোধনের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় এই বন্দরকে এখনো কর্মমুখর করা যায়নি।