গণশুনানিতে উপস্থাপন হলো পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/02/17/photo-1455705316.jpg)
মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একীভূতকরণে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণশুনানিতে টেলিকম সংশ্লিষ্ট ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পক্ষে-বিপক্ষে নানা দিক তুলে ধরেন।
আজ বুধবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রধান সভাকক্ষে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
গণশুনানিতে মোবাইল ফোন গ্রাহক, সরকারি বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, টেলিসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, রবি ও এয়ারটেল অপারেটরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গণশুনানির শুরুতে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার কথা চলছে। দুটি কোম্পানি এক হলে অন্য কোম্পানিগুলোর ওপর কেমন প্রভাব পড়বে তা জানতে তাদের কথা শুনেছি। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় বিদ্যামান টেলিকম কোম্পানিগুলোর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা জরুরি।’
ড. শাহজাহান বলেন, বর্তমানে মোবাইল সেক্টরে গ্রামীণফোনের বাজার ৪২ শতাংশ। তাদের গ্রাহকসংখ্য পাঁচ কোটি ৭০ লাখ। ২৫ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক। তাদের গ্রাহক তিন কোটি ৯০ লাখ। রবি ২১ শতাংশ, এয়ারটেল ৮ শতাংশ, টেলিটক ৩ শতাংশ ও সিটিসেল ১ শতাংশ বাজার ধারণ করে। রবির কোম্পানি দুটি এক হলে দেশের টেলিকম খাতে তাদের অবস্থান দাঁড়াবে ২৯ শতাংশ।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বড় কোম্পানি বিশেষ করে টেলিকম কোম্পানি একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন ধারণা নেই। বিটিআরসির কাছে প্রস্তাব আসার পর চার ধাপে কাজটি সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দুটি ধাপ শেষ করা হয়েছে। সব ধাপ শেষে সামাজিকভাবে এর প্রভাব কেমন হতে পারে সব বিবেচনায় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় মূলত সিদ্ধান্ত নেবে।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া বাংলালিংকের কর্মকর্তা ও গ্রাহক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘একীভূতকরণকে আমরা সমর্থন করি। তবে বিদ্যমান অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তুলনা করে তরঙ্গ বরাদ্দ ও একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি। কারণ রবি-এয়ারটেল এক হলে তাদের স্পেকট্রাম গ্রাহকের তুলনায় বেশি হবে।’
মোবাইলের রিচার্জ সেবাদানকারী ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সালাউদ্দিন বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠান এক হলে প্রায় দুই লাখ লোক বেকার হবে। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসির উচিত একটি সমাধান নিয়ে অগ্রসর হওয়া।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে বলা হয়, দুটি কোম্পানি এক হলে গ্রাহক স্বার্থ কতটুকু রক্ষা হবে তার একটি গাইডলাইন থাকা জরুরি। কারণ বাজারে বেশি কোম্পানি থাকলে প্রতিযোগিতা বাড়ে। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা হয়। তিনটি কোম্পানির হাতে সব ক্ষমতা চলে গেলে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাজারে তাদের প্রভাব তৈরির ক্ষেত্রে আরো সতর্কতার সঙ্গে এগোনো উচিত। এমনকি আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
গণ শুনানিতে অংশ নেওয়া গ্রাহক আবুল হাসনাত বলেন, ‘দুটি কোম্পানি একীভূত হলে দুটি কোম্পানির বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা গ্রাহক কতটা পাবে তা এখনো আমরা নিশ্চিত নই। এটা নিয়ে জেলা পর্যায়ে আরো গণশুনানি করা যেতে পারে।’
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানির প্রতিনিধিরাও মোবাইল গ্রাহক হিসেবে তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেন।
দুই কোম্পানি এক হলে তাদের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় চার কোটি, যা বাংলাদেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের এক-চতুর্থাংশ। গ্রাহক সংখ্যায় গ্রামীণফোন আছে সবার ওপরে।
রবির মালিকানা মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপের। এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসেবে গত ডিসেম্বর শেষ নাগাদ বাংলাদেশে মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৩৭ লাখ। এ সময়ে অপারেটর রবির গ্রাহকসংখ্যা দুই কোটি ৮৩ লাখ ও এয়ারটেলের এক কোটি ৭১ হাজার।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির কমিশনার মনিরুল ইসলাম, মো. জহিরুল ইসলামসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।