বাইসাইকেল রপ্তানিতে ১১ মাসে আয় ৭১৮ কোটি টাকা
মানসম্পন্ন হওয়ায় দেশের বাইসাইকেলের রপ্তানির বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) ১১ মাসে ৭১৮ কোটি টাকার বাইসাইকেল রপ্তানি করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই রপ্তানি হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোতে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এক হাজার ৫৬ কোটি টাকার সাইকেল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আগের অর্থবছরে (২০১৪-১৫) রপ্তানি ছিল এক হাজার আট কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে বাইসাইকেল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয় ৯৫২ কোটি টাকা। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৭১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো। প্রতি মাসে দেশ থেকে গড়ে ৮০-৮৫ কোটি টাকার সাইকেল রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রকৌশল শিল্পজাত পণ্য রপ্তানিতে বাইসাইকেলের অবদান ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
রাজধানীর বংশাল ও নবাবপুরে দেশের সবচেয়ে বড় বাইসাইকেল বাজার অবস্থিত। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে সাইকেল বিক্রির চেইন স্টোর। এসব দোকানে সাড়ে চার হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের সাইকেল খুচরা দামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে মাঝারি দামের সাইকেলের ক্রেতা বেশি।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার সস্তা হওয়ায় তাইওয়ানের কোম্পানি আলিতা বাংলাদেশ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে সাইকেল রপ্তানি শুরু করে। পরে এ ধারায় যুক্ত হয় মেঘনা গ্রুপ ও আরএফএল গ্রুপ। এখন আরো কিছু প্রতিষ্ঠানও সাইকেল উৎপাদন করছে। এর মধ্যে এইস বাইসাইকেল লিমিটেড, ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল কোম্পানি, সিরাজ বাইসাইকেল লিমিটেড, জার্মানি-বাংলাদেশ বাইসাইকেল, নর্থ বেঙ্গল সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে মাউন্টেন বাইক, সিটি বাইক, ফ্রি স্টাইল, ট্র্যাকিং, ফোল্ডিং, বিচ ক্রুসার ও কিডস বাইক জাতীয় সাইকেল তৈরি হচ্ছে। এর একটি অংশ দেশের বাজারে ও বাকি অংশ রপ্তানি হচ্ছে।
বর্তমানে ফ্রিস্টাইল, মাউন্টেন ট্র্যাকিং, ফ্লোডিং, চপার, রোড রেসিং, টেন্ডমেড ধরনের বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে। এসব সাইকেলের কিছু যন্ত্রাংশ আমদানি করা হলেও বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই দেশে তৈরি হচ্ছে। বিশেষত চাকা, টিউব, হুইল, প্যাডেল, হাতল, বিয়ারিং, আসন তৈরি করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান।
সিরাজ সাইকেলের স্বত্বাধিকারী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর রপ্তানি নির্ভর করে। চলতি বছর প্রত্যাশার চেয়ে রপ্তানিতে কিছুটা ভাটা পড়লেও দেশে সাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। আমাদের শ্রমিক খরচ কম। ইউরোপের বাজারে প্রচলিত দামের চেয়ে কম দামে বাইসাইকেল রপ্তানি করেও বাজার দখল করা সম্ভব। সাইকেলের সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশ রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে। এ খাত দ্রুত বিকাশের সম্ভাবনা বেশি।’
বাংলাদেশে আরএফএল ও মেঘনা গ্রুপ সাইকেল রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে মেঘনা গ্রুপের তিনটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যথাক্রমে- ট্রান্সওয়ার্ল্ড, ইউনিগ্লোরি ও মাহিন সাইকেলস লিমিটেডের মাধ্যমে সাইকেল রপ্তানি করছে। আরএফএল গ্রুপও দেশের বাজারের চাহিদা পূরণ করে সাইকেল রপ্তানি করছে।
বাইসাইকেলের ৪০ শতাংশ যন্ত্রাংশ আমদানি করা হলেও তা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।
বাংলাদেশে উৎপাদিত বাইসাইকেল মূলত যুক্তরাজ্য, জার্মানি, হল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল ও কানাডায় রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের উৎপাদিত বাইসাইকেল ইউরোপের দেশগুলোতে বিক্রি হলেও দেশের বাজার এখনো আমদানিনির্ভর।
সাইকেল আমদানি প্রসঙ্গে স্বদেশ এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত ভারত ও চীন থেকে সাইকেল আমদানি করা হয়। দেশের সাইকেলের চেয়ে এসব সাইকেলের চাহিদা বেশি, কারণ দাম কম। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় রেখে এসব পণ্য আমদানি করা হয়। দেশের চাহিদার আলোকে উদ্যোক্তারা কম দামের সাইকেল তৈরি করলেই আমদানি কমে আসবে।’
বাংলাদেশ বাইসাইকেল মার্চেন্টস অ্যাসেম্বব্লিং অ্যান্ড ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নুরুল হক বলেন, ‘খুচরা বাজারে দেশের সাইকেলের চেয়ে বিদেশি পণ্যের চাহিদা বেশি। সাইকেলের পার্টস আমদানি করা হচ্ছে। এরপর সংযোজন করে পূর্ণাঙ্গ সাইকেল হিসেবে বাজারে যাচ্ছে। সাধারণত ভারত ও চীন থেকে এসব পার্টস আমদানি হয়।’
‘বাংলাদেশে মেঘনা ও আরএফএল ছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাইকেল প্রস্তুত করে। দেশের চাহিদা ও রপ্তানির পরিমাণ বাড়ায় দেশে সাইকেলের টায়ার-টিউবসহ খুচরা যন্ত্রাংশের কারখানাও গড়ে উঠেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সাইকেলের বৃহত্তম পাইকারি বাজার বংশালে কয়েক বছরে সাইকেল বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বংশালে সাইকেলের প্রায় দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। সারা দেশে এর সংখ্যা চার হাজারের মতো। এসব দোকানে কানাডা, ট্রেক, হিরো রেঞ্জার, ম্যাক্স, লক্স, জোহান, ফুজি ও তাইওয়ানের তৈরি মেরিডাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাইকেল পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীদের মতে, সাইকেল রপ্তানি বাড়লেও এখনো ধীরগতি রয়েছে। গতি বাড়াতে সরকার ও উদ্যোক্তাদের এখনই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।