শঙ্কিত তৈরি পোশাক ক্রেতারা, সাক্ষাতের সময় পেছাচ্ছে

গুলশান হামলার ঘটনায় শঙ্কিত তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক পেছাচ্ছেন তাঁরা। এ পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন বিদেশি নাগরিক। আর তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিল তৈরি পোশাকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গুলশানের হামলার ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভীতির মধ্যে ফেলেছে। বিদেশি অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকগুলো করতে কালক্ষেপণ করছেন। অনেকেই আবার তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসাইন বলেন, ‘শরৎকালীন ও গ্রীষ্মকালীন যে অর্ডার, সেটা আমাদের মোট অর্ডারেরে ৬০ শতাংশ। সে অর্ডারটা যদি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যদি তাঁরা আসতে দেরি করেন, যেহেতু এটা টাইম বাউন্ড বিজনেস, আমরা ভয় পাচ্ছি কিছু ব্যবসা কমে যেতে পারে। সেটি আমাদের আশঙ্কার বিষয়। বিদেশিরা এখন আসার জন্য পর্যবেক্ষণ করছেন যে তাঁরা আসবেন কি আসবেন না—এই যে পর্যবেক্ষণে তারা কালক্ষেপণ করছেন, তাতে করেই ব্যবসাটার ক্ষতি হতে যাচ্ছে।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে থাকে, এ রকম রপ্তানি অর্ডার দেওয়ার মতো সক্ষম মার্কেট খুব বেশি কিন্তু নেই। যতটুকু পরিস্থিতি আমরা দেখছি আমার কাছে মনে হয়, একেবারেই এটি সাময়িক পরিস্থিতি এবং এটি সাময়িকই থাকবে যদি সরকার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকির উন্নতি ঘটাতে পারে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে দেশের রপ্তানি আয়। আর এর ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে। এ শিল্পের ওপর অনেকটা ভর করেই চলতি অর্থবছরেও (২০১৬-১৭) তিন হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।
রপ্তানি খাতের স্বার্থে বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি জঙ্গি হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রসাশনকে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
গুলশান হামলার পর পোশাকশিল্পে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির। তিনি বলেন, ‘এ সংকটের পর বায়াররা কিছুটা শঙ্কিত। বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করছি তাদের। আমাদের সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনা (সন্ত্রাসী হামলা) না ঘটে তাহলে আশা করছি যে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করেন, তাঁদের কর্মস্থলে ও তাঁদের বাসায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়ে সরকার যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলে আমার মনে হচ্ছে উদ্যোক্তারা বা বায়াররা এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করবেন।’
তৈরি পোশাকশিল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে সংস্কারের কার্যক্রমের কারণে আগামীতে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের ব্যাপারে আরো আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতারা।