এনবিআর ‘ভাগের’ অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে ‘কলম বিরতির’ ডাক

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এ দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতির কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এ ঘোষণা দেন। এসময় এই অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে তিন কার্যদিবস কলম বিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, বৃহস্পতিবার ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ বিরতি চলবে। তবে, কর্মসূচির আওতায় থাকবে না আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম ও জাতীয় বাজেট কার্যক্রম।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত আন্দোলনে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দুই ভাগ করার এই অধ্যাদেশ গভীর রাতে, কোনো গণশুনানি ছাড়াই, গোপনে জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু এনবিআর নয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকেই বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, সরকার উন্নয়নমুখী অবস্থান থেকে সরে এসে আমলাতান্ত্রিক কায়দায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করছে। যা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। তাই এনবিআর সংস্কারে নিশিরাতের এই অধ্যাদেশ বাতিল চায়। এনবিআর সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন কখনোই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। কার স্বার্থরক্ষায় এত গোপনীয়তা?
ঐক্য পরিষদের তরফে কলম বিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেন অতিরিক্ত কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) সাধন কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে তা দ্রুত জারি হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারদের কর্মীরা এটি বাতিলের দাবি তোলে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের পদসমূহ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন যুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলো আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ। অধ্যাদেশে নীতির সচিব হিসেবে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলুপ্তির ফলে এর বর্তমান সাংগঠনিক জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত হবে। আর দুই বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো কেমন হবে, তার সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবে।