মাতৃভাষায় গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা জরুরি, চাঁবিপ্রবি’র ওয়েবিনারে বক্তারা
দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।
আজ মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) আয়োজিত ‘মাতৃভাষা উন্নয়ন ও অগ্রগতির শেকড়ে শক্তি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তাঁরা।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতারের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান চৌধুরী।
চাঁবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাছিম আখতার বলেন, ‘৫২ এর এই দিনে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করেছিল। বিশ্বের অনেক দেশেই মাতৃভাষার স্বীকৃতি নিয়ে লড়াই হলেও জীবন দেওয়ার মতো ঘটনা বাংলাদেশেই ঘটেছে।’
উপাচার্য ড. নাছিম বলেন, ‘মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি মিললেও এই ভাষার ব্যবহার এখনও সর্বত্র দেখা যাচ্ছে না। তবে দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে হলে মাতৃভাষায় গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।’
এ সময় ভারত ও চীনের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি উল্লেখ করে ড. নাছিম আখতার বলেন, ‘ভারতের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন ভাষার প্রচলন রয়েছে। তবে চীন একমাত্র মান্দারিন ভাষায়ই গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা করে। এজন্যই চীনের অগ্রগতি ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের দেশকেও উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে হলে বাংলা ভাষাতেই বিজ্ঞান ও গবেষণা চর্চা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রচিন্তার উদয় হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতেই স্বাধীন হয় এই দেশ। ভাষা আন্দোলনের সময় কারাগারে অবস্থান করেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাতৃভাষাকে কতটা গুরুত্ব প্রদান করতেন, তা বোঝা যায় জাতিসংঘে তার বাংলায় ভাষণ দেওয়ার ঘটনায়। পরবর্তীতে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন।’
দীর্ঘদিন জাপানে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ড. সাইফুদ্দীন বলেন, ‘জাপানে অধ্যয়নকালে আমার সহপাঠীরা সর্বদা মাতৃভাষায় গবেষণা চর্চার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেন। জাপানের গবেষকরা মাতৃভাষায় গবেষণা করার বিষয়ে জোর দিতেন। আমাদেরকেও মাতৃভাষায় গবেষণা করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, কিন্তু আমরা এখনও দেশের সর্বত্র এই ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি। উন্নতি ও অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের যে ভূমিকা, তার পুরোটা অর্জনে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও গবেষণা চর্চা করতে হবে।’
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার মো. মেহেদী হাসান।