ইন্টারনেটেই বিদেশি গ্র্যাজুয়েশন!

ইন্টারনেট আজ আমাদের জীবনের এক মৌলিক চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের এই অসীম দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির খোঁজ, ব্যবসায়িক লেনদেন, পণ্যের কেনাবেচা সবই চলছে সমান তালে। ইন্টারনেট বদলে দিয়েছে একুশ শতকের ব্যবসা কিংবা যোগাযোগের যত ব্যাকরণ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে হয়েছে শিক্ষাও। ঠিক, আপনি ঘরে বসেই এখন দেশ-বিদেশের নামি-দামি বিদ্যাপিঠের ডিগ্রি নিতে পারেন। উন্মুক্ত এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পাবেন আপনার প্রয়োজনের সব।
ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স বা MOOC অনলাইন দুনিয়ায় এখন বেশ জনপ্রিয়। খুব সহজেই এখন আপনি আপনার পছন্দের কোনো বিষয়ের ওপর কোর্স করে ফেলতে পারেন। একেবারে হেলাফেলা করার মতো নয় কিন্তু- রীতিমতো নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা অধ্যাপক থাকবে কোর্স পরিচালনায়। ঠিকমতো উতরে যেতে পারলে মিলবে সার্টিফিকেটও। বিভিন্ন বিষয়ের হাজারো কোর্স এখন ভার্চুয়াল জগতে।
২০০৮ সালের গোড়ার দিকে মূলত অনলাইন শিক্ষার এই ধারণাটির উদ্ভব ঘটে। উন্নত দেশের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার ধরন ও মান সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে এই ধারণার গোড়াপত্তন। খুব স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের শিক্ষার্থীরা দারুণ উপকৃত হচ্ছে এই ব্যবস্থায়। ভারত, ইথিওপিয়া, সুদান, উগান্ডার মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি নিচ্ছে MOOC-এর সুবিধা। লেকচার ভিডিও, অনলাইন অ্যাসাইনমেন্ট, অনলাইন টেস্ট এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এসব কোর্স, সাথে থাকছে শিক্ষার্থীদের নিজেদের ভেতরে মগজ ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগ! বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিকাশের ফলে এখন চাইলে এ দেশের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারেন এই ভার্চুয়াল পাঠশালায়।
অনলাইন কোর্স করার সুযোগ দিচ্ছে এমন কিছু ওয়েবসাইটের খোঁজ থাকছে এখানে-
Coursera urgentPhoto
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক অ্যান্ড্রিউ এনজি ও ডেপান কোলার এই ওয়েবসাইটের মূল উদ্যোক্তা। খুব অল্প সময়েই MOOC-এর জগতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে এই ওয়েবসাইট। পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, চিকিৎসাশাস্ত্র, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় এক হাজারেরও বেশি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এই ওয়েবসাইটে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের উপযোগী করে মূলত সাজানো হয়েছে কোর্সগুলো। আর কোর্স পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।
এখানে বেশির ভাগ কোর্সই শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে করতে পারবেন, তবে কিছু কোর্স ও সনদের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট ফি, তবে তা একেবারেই সামান্য। বর্তমানে ১৯০টি দেশের প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী Coursera-এর কোর্সের সাথে যুক্ত।
Edx
Coursera-এর মতই সারা জাগানো আরেক ওয়েবসাইটের নাম Edx. ম্যসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজি (এমআইটি) ও হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই ওয়েবসাইটি যাত্রা শুরু করে ২০১২ সালের মাঝামাঝি। বর্তমানে প্রায় ৩০০টি কোর্স চালু রয়েছে এই ওয়েবসাইটের অধীনে, সবই বিনামূল্যে। শুধু এমআইটি কিংবা হার্ভাড নয়, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এই প্লাটফর্মে। প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী ব্যবহার করছে এই ওয়েবসাই।
Khan Academy
খান অ্যাকাডেমি নামটির সাথে আমরা অনেকেই বেশ পরিচিত। খান অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশদ্ভূত সালমান খান সমগ্র পৃথিবীতেই সাড়া ফেলে দেন, জায়গা করে নিয়েছেন টাইম ম্যাগাজিনের সেরা ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায়। খান অ্যাকাডেমির যাত্রা শুরু মূলত ২০০৪ সালে, সালমান সে সময় তাঁর কাজিন নাদিয়াকে পড়ালেখার বিষয়ে নানা সমস্যার সমাধান দিতেন, আর এই কাজ তিনি সারতেন ইন্টারনেটে। আর এখান থেকেই মূলত খান অ্যাকাডেমির গোড়াপত্তন। পরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কিছু ভিডিও বানিয়ে সেগুলো আপলোড করে দেন ইউটিউবে। অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে সেই উদ্যোগ।
বর্তমানে চার হাজারেও বেশি ভিডিও রয়েছে খান অ্যাকাডেমির ওয়েবসাইটে, আর ভিডিওগুলো দেখা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি বার! গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ইতিহাস, অর্থনীতি, জীববিদ্যা, সমাজবিদ্যা, প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও লেকচার পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটে। কোনো বিষয়ের একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত শেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। সাথে রয়েছে অনলাইন টেস্টের সুযোগ, মুহূর্তেই নিজের অগ্রগতি জেনে নেওয়ার সুযোগ।
Peer to Peer University
এই ওয়েবসাইটে কিন্তু কোনো শিক্ষকের পরিচালনায় কোর্স নেই, বরং এখানে সবাই শিক্ষক সবাই ছাত্র! মূলত যে কেউই তার নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্র থেকে কোনো কোর্স তৈরি করে ফেলতে পারেন, আর বাকি সবাই শিখে নিতে পারবেন তাঁর প্রয়োজনমতো, সাথে সেই কোর্সের বিভিন্ন দিকের উন্নতি বা পরিবর্তনও করতে পারবেন। ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা, সমস্যা সমাধান কিংবা নিত্যনতুন সমস্যা তৈরির মাধ্যমেই মূলত এখানে নিজেদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করে থাকেন।
এ ছাড়া UDACITY, iversity, Canvas Network-এর মতো আরো কিছু ওয়েবসাইটেও রয়েছে বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ! তবে আর দেরী কেন, ভার্চুয়াল এই স্মার্ট জগতেই হোক চটপট পড়াশোনা!