বরাদ্দ সংকটে হারাতে বসেছে পবিপ্রবির দুটি লেকের ঐতিহ্য

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ঐতিহ্যবাহী লালকমল ও নীলকমল লেক বর্তমানে চরম অবহেলার শিকার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের স্বপ্নিল সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক এই লেকদুটি আজ বিপদাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। পার্শ্ববর্তী মাটি সরে গিয়ে তৈরি হয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি। স্থানীয় জলবায়ু ও দুর্যোগপ্রবণ পরিবেশে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মীর মো. নুরুননবী, ইএসডিএম অনুষদের শিক্ষার্থী ও ইএসডিএম ক্লাবের সভাপতি আফিয়া তাহমিন জাহিন এবং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারদিন হাসান বলেন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে আমরা এখানের দৃষ্টিনন্দন কাঠের ব্রিজের ওপর ও লেকের পাড়ের বেঞ্চের ওপর বসে একটু স্বস্তি খুঁজি। কিন্তু এখন চারপাশের ভাঙা পাড় ও গাছের হেলে পড়ার ভয়ে আতঙ্ক নিয়ে হাঁটতে হয়। এটা শুধু সৌন্দর্যের নয়, নিরাপত্তার বিষয়ও।
কর্মচারী সমিতির সদস্য মো. মোশারেফ হোসেন, মাসুম বিল্লাহ, রেদোয়ানুল ইসলাম রমজান ও কামাল হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে লেক পাইলিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছি। এটা অল্প পয়সায় মেরামতের কাজ নয়, ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, তারা যেন এবছরের বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আমাদের এটার স্থায়ী সমাধান করে দেন।
পর্যটক হিসেবে আগত জয়পুরহাট জেলার এক ভ্রমণ পিপাসু রোজিনা আক্তার বলেন, এমন শান্ত পরিবেশ খুব কম জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু ভাঙা পাড় আর ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো দেখে হতাশ হয়ে যেতে হয়। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, শিক্ষার পরিবেশ, জননিরাপত্তা এবং স্থানীয় অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের একাধিক শিক্ষক জানান, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে লেক দুটির পার ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে লালকমল লেকের পাশে অবস্থিত প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো নারিকেল গাছ ও এক যুগেরও বেশি বয়সী মেহগনি গাছগুলোর গোড়ার মাটি সরে গিয়েছে। গাছগুলো এখন যেকোনো সময় উপড়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করলেও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মুহাইমিনুল আলম ফাইয়াজ, কৃষি অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ড. সগিরুল ইসলাম মজুমদার ও ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, লেকদুটির প্রাকৃতিক পরিবেশ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও লেকের পাড়ের মেহগনি গাছগুলোতে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই লেকদুটি ঘিরেই পবিপ্রবির জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ক্যাম্পাস গড়তে আমাদের প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবুও আমরা পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।

ড. কাজী রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, লালকমল ও নীল কমল নামের দুটি লেক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দুটি লেক শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। তাই লেক দুটির চারপাশে পাইলিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে এ বিষয়ে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি এবং বিশ্বাস করি, কমিশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে এ বছরের বাজেট থেকেই অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করবেন।