গাজীপুরে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর ও তাঁর মায়ের নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাঁর পক্ষে এ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়। এ সময় তাঁর মা জায়েদা খাতুনের নামে আরও একটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৬ এপ্রিল) গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে স্থাপিত নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র দুটি সংগ্রহ করা হয়।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপা ও গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীসহ মেয়র পদে চার প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসারের কাছে আজ বুধবার জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া এদিন পর্যন্ত সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ১৯১ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থিতার জন্য ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া এদিন পর্যন্ত সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ৩৪০ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৯৮ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে চার জন, সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ১৯১ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৬৪ জনসহ মোট ২৫৯ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র এ পর্যন্ত জমা দিয়েছেন।
আজ বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে যে চার প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ও ৩৫ নং ওয়ার্ডের দুবার নির্বাচিত কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হারুন অর রশীদ ।
সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে নির্বাচনে তাঁর অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে তাঁর অংশ নেওয়ার বিষয়টি এ পর্যন্ত ছিল অনেকটাই ধুঁয়াসাচ্ছন্ন। আজ তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি মুহূর্তেই মহানগরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এটি পরিণত হয় ‘টক অব দ্য টাউনে’। তাঁর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ফিরে প্রাণচাঞ্চল্য। বিষয়টি তাঁর কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। নতুন করে নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ করতে শুরু করেছে নগরবাসী। তিনি অংশ নিলে মেয়র পদে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে তিন বছরে মহানগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। যা এ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মহানগরের জনগণের আমার প্রতি বিপুল সমর্থন রয়েছে। তাদের ভালোবাসা ও আগ্রহের কারণে আমি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আশাকরি গত নির্বাচনের মতো এবারও জনগণ বিপুল ভোটে আমাকে বিজয়ী করবেন। তিনি মহানগরের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।
অপর দিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় দলের নেতাকর্মীসহ তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে, ছেলে ও শাশুড়ি উপস্থিত ছিলেন।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর এম এম নিয়াজ উদ্দিন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি আশা করি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণের বিপুল ভোটে আমি জয় লাভ করব।’
এম এম নিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘বিগত অনেক নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। অনেক নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা অনিহা সৃষ্টি হয়েছে। আমি প্রত্যাশা করি, গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে সরকারের এখানে ভূমিকা থাকতে হবে, যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।’
জাপা প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া উপলক্ষে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সাত্তার মিয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য বাবু পবন চন্দ্র ঘোষ, শেখ মাসুদুল আলম টিটু, মহানগর জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক সালাম মোল্লাসহ দলের বহু নেতাকর্মী উপস্থিত হন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, বুধবার পর্যন্ত মেয়র পদে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, ইসলামী আন্দোলন- বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির প্রার্থী মো. রাজু আহম্মেদসহ স্বতন্ত্রপ্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম, আবুল হোসেন, মোকলেছুর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র আজ বুধবার পর্যন্ত জমা পড়েনি।
এ এইচ এম কামরুল হাসান আরও জানান, গত ৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৭ এপ্রিল। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল এবং প্রার্থিতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মে। আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭২১, মহিলা ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৮।