মেঘনার বুকে জেগে ওঠা গ্রাম পাচ্ছে বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে থেকেও এতদিন অন্ধকারে ঢাকা ছিল গ্রামটি। সন্ধ্যা নামলেই মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চর সোনারামপুর হয়ে উঠত থমথমে। শিক্ষার আলো ফোটাতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের চলতো এক প্রকার যুদ্ধ। এরই মধ্যে আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারপর শুরু হয় সমালোচনা। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সেই গ্রামটি পেতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। এতে আনন্দিত স্থানীয়রা।
শত বছর আগে মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠেছিল চর সোনারামপুর। তবে চার দশকের বেশি সময় ধরে সেখানে চলছে বসতি। বর্তমানে গ্রামটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করেই জীবিকা চলে তার অধিকাংশ বাসিন্দার। অবশ্য কেউ কেউ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত।
এ গ্রাম থেকে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। আর ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। তারপরও চর সোনারামপুর এতদিন বিদ্যুৎবঞ্চিত ছিল। অথচ গত ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা জ্যোতিষ বর্মন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বছরের পর বছর কেটেছে শুধু বিদ্যুতের আশায়। মোমবাতি-কূপি জ্বালিয়ে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এখন গ্রামে বিদ্যুৎ আসবে বলে শুনেছি। বৃদ্ধ বয়সে এ খবরে আমি খুশি। গ্রামের মানুষের দুঃখকষ্ট কমবে বলে মনে করছি।’
চরের আরেক বাসিন্দা ঝুমন দাস বলেন, ‘বিদ্যুত না থাকায় গ্রামবাসীকে অনেক কষ্ট করতে হয়। বিদ্যুৎ পাওয়ার খবরে সবাই আনন্দিত।’ কাজটি দ্রুত শেষ করে গ্রামকে আলোকিত করার দাবি জানান তিনি।
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ (সরবরাহ) বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হচ্ছে। ১১ হাজার ভোল্ট সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন করা হবে। এ কাজের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ড্রিলটেক ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি হয়েছে। পুরো কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।
চর সোনারামপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মালামাল গত শনিবার থেকে মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে এনে মজুদ করা হয়েছে। পরে গতকাল সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। কাজ শেষ হওয়ার পরপরই চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।’