মেয়েদের কাছে পেয়ে মুখ খুললেন রহিমা
অবশেষে উদ্ধারের ১৬ ঘণ্টা পর মুখ খুলেছেন রহিমা বেগম। তিনি দাবি করেছেন, নিজ বাসার নিচ থেকে চার থেকে পাঁচজন লোক মুখে কাপড় বেঁধে তাঁকে অপহরণ করেছিল। আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে সন্তানদের মুখোমুখি করা হলে তিনি মুখ খোলেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘শনিবার ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধারের পর থেকে কোনো কথাই বলছিলেন না রহিমা বেগম। বেলা ১টার দিকে মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ তাঁকে চার মেয়ের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় মেয়েরা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন বলে দাবি করেন। কান্নারত অবস্থায় মেয়েরা মাকে বলতে থাকেন, আমাদের ছেড়ে আর কোনোদিন কোথাও যাবে না। আমাদের জমির দরকার নেই। তোমাকে দরকার।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘রহিমা বেগমকে অপহরণের পর অজ্ঞাতস্থানে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন। জমি-জমার বিরোধ থাকা কিবরিয়া, মহিউদ্দিনসহ কয়েক ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ও বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁকে এক হাজার টাকা দিয়ে ছেড়ে দেন।’
রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে পূর্ব পরিচিত ভাড়াটিয়ার ফরিদপুরের বোয়ালখালী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে যান। কিন্তু, তাঁর কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য খতিয়ে দেখছি। তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু করা হবে।’
এর আগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে গত শনিবার রাতে উদ্ধারের পর রহিমা বেগম (৫৫) ও আরও দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারীর কুদ্দুসের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কুদ্দুস এক সময় খুলনার জুট মিলে চাকরি করতেন ও রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলেন।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে রহিমা বেগমকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে আনা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা। রহিমার ছয় সন্তান কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনও মাইকিং, কখনও আত্মীয়স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলন মানববন্ধনের পর মাকে খুঁজে পেতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় মামলাও দায়ের করেন। মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের ভার পায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হয়—এ অভিযোগ তুলে তার মেয়ে আদুরি আকতার বাদী হয়ে পরের দিন দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জন আটক হয়েছেন। তাঁরা হলেন—খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ।