ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হুজির ফখরুলসহ গ্রেপ্তার ৬

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজির) ছয় সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। এদের মধ্যে ফখরুল ইসলাম (৫৮) আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় আলকায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন বলে দাবি পুলিশের।
গতকাল শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার বাকি পাঁচজন হলেন—সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। তাদের কাছ থেকে ৯টি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদেশ থেকে জঙ্গি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া হুজির সক্রিয় সদস্য ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান। সেখানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদী ট্রেনিংয়ের কমান্ডার। মুফতি জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন।
সিটিটিসি ইউনিট প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, ফখরুল ইসলাম জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান। ফখরুল ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা শেখেন। ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা ডিউটি দিতেন। সে সময়ে তিনি আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ফখরুল ইসলাম আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদী ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে গিয়ে তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে আসেন।
ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যসংগ্রহ, অর্থসংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। ফলে হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। কিন্তু, এই ফখরুল ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেন। ওই হামলার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চেয়েছিলেন যে, হুজি এখনও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।
মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, ফখরুল ইসলাম সাংঠনিক কার্যক্রম স্বশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। ফখরুল ও তার ছেলে আটককৃত আসামি মো. সাইফুল ইসলামসহ (২৪) অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। রোহিঙ্গাদেরকে তাদের সংগঠনে রিক্রুটের উদ্দেশে মোটা অংকের টাকাও অনুদান দেন। অন্যান্য গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরাও এসব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।