সীমান্ত সমস্যা সমাধানে দিল্লিতে বৈঠক ফেব্রুয়ারিতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আগামী মাসে এ বিষয়ে ভারতের দিল্লিতে দুদেশের মধ্যে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) তাঁর অফিসকক্ষে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতিত হচ্ছে না। এটা ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার। সংখ্যালঘু শব্দটা আমরা ব্যবহার করতে চাই না। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক ও সবার সমান অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ৫ আগস্টের পর যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেটি মূলত রাজনৈতিক কারণে, ধর্মীয় কারণে নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি করে রোহিঙ্গা শরণার্থী (বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) পুনর্বাসন করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করেছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি করে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আহ্বান জানাই। চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জানান, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উন্নয়ন ও পুনর্বাসনে বৃহত্তম দাতা।
যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বাংলাদেশের স্থানীয় এনজিওদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করেছে এবং এটি চলমান রয়েছে।
বৈঠকে দুদেশের মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যু, সন্ত্রাস দমন, রোহিঙ্গা সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক সহযোগিতা, পুলিশ সংস্কার কমিশন, সীমান্ত পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু ইস্যু, কৃষি খাতে সহযোগিতা-সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বড় অংশীদার। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করে। সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামর্থ্য বৃদ্ধিতে তারা উন্নত প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র প্রদান করে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। তিনি মানবাধিকার ইস্যুতে পুলিশ এবং মানবপাচার ইস্যুতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে আরো বেশি হারে প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা অব্যাহত থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের আগের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি অনুমতি দিচ্ছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ দিবো। তবে কর্মকর্তারা যেন প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে এসে স্ব স্ব ডেস্কে কর্মরত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে যাতে এটি আরও ফলপ্রসূ হয়। আমাদের দুদেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা বিদ্যমান। তিনি এসময় সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় ও এ সংক্রান্ত ডাটাবেজ আপডেটের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রেসিডেন্ট লিগ্যাল অ্যাডভাইজার রাহুল কালে, ল এনফোর্সমেন্ট অ্যাটাচে মাইকেল ডব্লিউ হিন্টজ, পলিটিক্যাল মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জশ পোপ, অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিয়নাল সিকিউরিটি অফিসার স্টিফেন কোভাকস সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।