ধরলা নদীতে চারদিনব্যাপী নৌকাবাইচ
আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে ১৬টি নদ-নদী দিয়ে বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রামে চলছে চারদিনব্যাপী নৌকাবাইচ। এই নৌকাবাইচ দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ২০টি নৌকার দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগবন্ধুর চর এলাকায় ধরলা নদীর পাড়ে চারদিনব্যাপী নৌকাবাইচের আয়োজন করেছে স্থানীয় নৌকাবাইচ কমিটি।
গত বুধবার বিকেল থেকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দুরন্ত চিতা, হাসি-খুশি, বাংলার বাঘ, একতা এক্সপ্রেস, ভাই-বোন, দাদা-নাতি, দশবন্ধু ও দশের দোয়াসহ ২০টি নৌকার দল প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। আগামীকাল শনিবার ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে নৌকাবাইচ। নৌকাবাইচের প্রথম পুরস্কার একটি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় পুরস্কার একটি গরু, তৃতীয় পুরস্কার একটি রঙিন টেলিভিশন ও চতুর্থ পুরস্কার একটি মোবাইল ফোন।
শুধু এলাকাবাসী নয়, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে বিপুলসংখ্যক মানুষ।
ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় নিজেদের ডুবিয়ে রাখলেও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা দেখতে এসেছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা সাঈদ সরকার বলেন, ‘বাপ-দাদার আমলের এসব গ্রামীণ খেলা এখন নেই বললেই চলে। শুকনো মৌসুমে নদীতে আর আগের মতো পানি থাকে না। এখানে নৌকাবাইচের কথা শুনে দেখতে এসেছি। হাজার হাজার মানুষ ধরলার তীরে দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচ উপভোগ করছে। অনেকদিন পর নৌকাবাইচ দেখে আনন্দে মনটা ভরে গেছে।’
জগবন্ধুর চরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নদীপাড়ের চরের মানুষ। নদ-নদীভাঙনের কারণে আমরা সব সময় কষ্টের সঙ্গে বসবাস করি। প্রতিবছর এ নৌকাবাইচের মাধ্যমে আমরা অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই।
নৌকাবাইচের আয়োজক কমিটির সভাপতি ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, বাপ-দাদার অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি বিশেষ করে নদ-নদী তীরবর্তী ভাঙনকবলিত মানুষজনের মনে আনন্দ দিতে নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিবছর এ নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। সাত বছর ধরে এই এলাকার ধরলা নদীতে নৌকাবাইচ হয়ে আসছে। আগামী বছরগুলোতেও এ নৌকাবাইচ অব্যাহত থাকবে।
নৌকাবাইচসহ প্রতিবছর হারানো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর আয়োজন করা হলে তা আনন্দ জোগাবে নদ-নদীপাড়ের সাধারণ মানুষের মনে- এমনটাই চাওয়া সবার।