গভীর রাতে সাংবাদিককে বাসা থেকে ‘তুলে নিয়ে’ জেল-জরিমানা
কুড়িগ্রামে এক সাংবাদিককে গভীর রাতে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার। পরে তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদক মামলায় কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আরিফুল ইসলাম রিগ্যান অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার জেলার সাংবাদিক ও স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছেন। তাঁরা সাংবাদিক রিগ্যানের মুক্তি চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁকে মুক্তি দেওয়া না হলে জেলা প্রশাসনের সব কর্মসূচি বয়কট করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে এই সাজা দেওয়া হয়।
তবে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে তিনি দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের স্ত্রী মোস্তারিমা নিতু অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল আমাদের বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। অনেকক্ষণ ধাক্কাধাক্কির পর আমরা দরজা খুলে দেই। এরপর ১৪ থেকে ১৫ জন লোক ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে টেনে-হেঁচড়ে মারতে মারতে বের করে নিয়ে যায়।’
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বোন রেজিকা বেগম রেজি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘... আমরা অনেক ঘাবড়ে যাই। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই, আমার ভাইকে প্রচুর মারধর করে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এবং পরবর্তী সময়ে এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা জানতে পারি রিগ্যানকে ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হইছে এবং এখানে তার উপর নৃশংস অত্যাচার চালানো হইছে। এবং পরবর্তী সময়ে জানতে পারি তাঁকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হইছে এবং এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হইছে।’
কী কারণে রিগ্যানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে পরিবার মনে করে- এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিকা বেগম রেজি বলেন, ‘এই ডিসি স্যারের বিরুদ্ধে কিছু লেখার কারণেই তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
আরিফুল ইসলাম রিগ্যান যে নিউজপোর্টালের হয়ে কাজ করেন, সেই বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে ঘটনাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর প্রতিবেদনে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন।
আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গত বছরের ১৯ মে ‘কাবিখা’র টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয় বাংলা ট্রিবিউনে। তবে শেষ পর্যন্ত ডিসির নামে সেই নামকরণ করা হয়নি। কুড়িগ্রামের ডিসি হিসেবে আছেন সুলতানা পারভীন।