আবার জেগে উঠছে নূর হোসেনের ‘সাম্রাজ্য’
নূর হোসেন দেশে ফিরেছেন। নারায়ণগঞ্জে ফিরেছেন তাঁর সহযোগীরাও। এরই মধ্যে কেউ কেউ সন্ত্রাস আর দখলের পুরোনো তৎপরতা শুরু করেছেন। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নুর হোসেনকে ফিরিয়ে আনা হবে এই খবরের পর থেকে ফিরতে শুরু করে এতদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকা সহযোগীরা।urgentPhoto
আর নূর হোসেন ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সহযোগীদের দাপটে গোটা সিদ্ধিরগঞ্জে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাত খুন মামলায় এজাহার থেকে বাদ যাওয়া হাজি ইয়াসিন মিয়ার নেতৃত্বে নূর হোসেনের ভাই নুরুজ্জামান জজ মিয়া, নুরুদ্দিন মিয়া আর ভাতিজা শাহজালাল বাদল এলাকায় আবার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন-এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকার অনেকে জানান, গত কিছুদিন ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছে চিহ্নিত সব সন্ত্রাসীদের। এতদিন তারা সবাই ছিল একেবারেই লাপাত্তা।
অপকর্মের সহযোগীদের এই প্রকাশ্য তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রীসহ অন্য স্বজনরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘিরে বালুমহাল গড়ে তুলেছেন নূর হোসেনের ভাই নূরুজ্জামান জজ মিয়া। অবৈধভাবে এখানে চলছে বালুর ব্যবসা। রাস্তায় দেখা মিলল জজ মিয়ার।
নতুন মডেলের গাড়িতে বসে তিনি। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসভবনে গেলে গ্যারেজে পাওয়া গেল সেই গাড়ি। যোগাযোগ করতে চাইলে বলা হয়, তিনি বাসায় নেই। অবশ্য এর কিছুক্ষণ পরে ওই বাসা থেকেই বের হয়ে এলেন জজ মিয়া। আর প্রতিবেদককে দেখে গাড়িতে করে দ্রুত সরে পড়েন তিনি।
অফিস ও বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদলকেও। নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস ও ঝুট ব্যবসার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিতি আছে তাঁর। পাওয়া যায়নি সিদ্ধিরগঞ্জের পরিবহন ও ফুটপাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা নূর হোসেনের আরেক ভাই নূর উদ্দিনকে। যদিও দুজনেরই পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আত্মগোপন থেকে এলাকায় ফিরেছেন তাঁরা।
এদিকে নূর হোসেনের সহযোগীদের প্রকাশ্য তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাত খুনের ঘটনার শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা। সাত খুনের ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি প্রচণ্ড নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি।’ নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘কুকুর কখন কামড় দেয়, এটা কাউকে বলে দেয় না। আমরা একটু উদ্বিগ্ন আছি।’
ভুক্তভোগীদের মতে, নূর হোসেনের ভাইদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা, মামলার এজাহার থেকে সম্প্রতি যিনি বাদ পড়েছেন। তিনিই এখন মূলত নূর হোসেনের অবৈধ সাম্রাজ্য চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁদের।
নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সাত খুনের মামলার এজাহার থেকে সম্প্রতি বাদ পড়াদের একজন সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আওয়াজ দিয়া কেউ কাজ করে বলে জানা নাই। যদি কেউ কৌশলে কোনো কাজ করে, সেটা তাদের বিষয় আমাদের জানা নাই।’
এ ছাড়া মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়া নূর হোসেনের অপর সহযোগী আমিনুল হক রাজু, আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেনও এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁদের। তবে এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।