প্রতিক্রিয়া
তবে ছবিটি কার?

সম্প্রতি যশোর কোতোয়ালি থানার ভিতর একজনকে নির্যাতনের চিত্র গণমাধ্যমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও ছবিটি নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা।
ছবির পেছনের ঘটনা গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, যশোর কোতোয়ালি থানায় আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তিকে ধরে আনা হয়। মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পর তার কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে পুলিশ। পরে তিনি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া পান। আবু সাঈদ নামের ওই ব্যক্তি যদি পরের দিন সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করে না বলতেন যে ‘ওই ছবিটা আমার নয়, পুলিশ ধরেছিল ঠিকই কিন্তু কোনো নির্যাতন করেনি।’ তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। যেহেতু সংবাদটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বরাবরের মতো সবাই পুলিশের প্রতি তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়তে থাকে। দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো যখন সংবাদটি প্রকাশ করল তখন যদি নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে কোট করা হতো তাহলে এ সমস্যা হতো বলে মনে হয় না।
যদি ছবিটি আবু সাঈদ নামের ওই ব্যক্তির না হয়ে থাকে তাহলে ছবিটি কার? ভাইরাল হওয়া ছবিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে; নির্যাতনের ধরন ও অবস্থানগত কারণে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং যে কেউ বিষয়টা অস্বীকার করতেই পারেন। কিন্তু আবু সাঈদ কোনো প্রভাবশালী মহল বা পুলিশ প্রশাসনের চাপে এমনটা করছে কি না- এটা ভাববার আগে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে যে গণমাধ্যমগুলো ছবিটি জুড়ে দিল তাদের দায়বদ্ধতা কি, সেটা ভাববার প্রয়োজন আছে। এখন যদি প্রমাণ করতে বলা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো এটার উপযুক্ত প্রমাণ দিতে সক্ষম হবে কি? আর না হলে এভাবে কেন প্রকাশ করা হলো ছবিটি? হিট বাড়ানোর জন্য সংবাদের চটকদার উপস্থাপন এ দেশে খুবই স্বাভাবিক।
পুলিশ বরাবরের মতো নির্যাতনের কথা অস্বীকার করতে পারে, আবার নাও করতে পারে। কিন্তু এ দেশে পুলিশকে বিশ্বাস করা বড্ড কঠিন কাজ। মানুষের আস্থা হারানোর জন্য এদের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যে সর্বাংশে দায়ী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এজন্যই হয়তো গণমাধ্যমগুলো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলেই তেমন যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে না। সবার ধারণা যথেষ্ট প্রবল যে, পুলিশের পক্ষে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়া কোনো ব্যাপার নয়!
পুলিশের দুর্নীতি ও গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন আচরণ- কোনোটাই কাম্য নয়। পুলিশের যেমন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে আস্থা অর্জন করা উচিত। তেমনি গণমাধ্যমের উচিত দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে শুধু হিট, লাইক, কমেন্টের আশায় সংবাদ প্রকাশ না করে তথ্য উপাত্ত যাচাই করে সংবাদ প্রকাশ করা।
লেখক : প্রতিনিধি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়