উৎসব
বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজা!
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই দুর্গোৎসবে এবার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছে বাগেরহাটের শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপটি। মূল মণ্ডপসহ আশপাশের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজসজ্জা।
এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের লাখো দর্শনার্থী, ভক্তবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তির পদচারণে মুখরিত হতে শুরু করেছে এ পূজামণ্ডপ। এদিকে এই আয়োজনকে ঘিরে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে কঠোর নিরাপত্তাসহ নিজস্ব উদ্যোগে তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। নিরাপত্তার স্বার্থে মণ্ডপে বসানো হয়েছে ৪৫টি সিসি ক্যামেরা। বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের ব্যবসায়ী লিটন শিকদারের বাড়িতে তৈরি করা হয়েছে এই সর্ববৃহত্তম পূজামণ্ডপ। মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে ৬০১টি প্রতিমা। দুর্গাপূজার অবিচ্ছেদ্য প্রতিমাগুলোর সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী এবং দেব-দেবীর প্রতিরূপ; রয়েছে বাহারি আলোকসজ্জা। আয়োজকদের মতে, শুধু বাগেরহাটই নয়; প্রতিমার সংখ্যা ও আড়ম্বতার দিক থেকে এ বছর এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজার মণ্ডপ। এই পূজামণ্ডপের নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, তাঁদের মণ্ডপে ভক্ত দর্শনার্থীদের ভিড় থাকবে নজরকাড়া। জেলার বিভিন্ন স্থান, অন্য জেলা এমনকি পশ্চিম বাংলা থেকেও আসবেন দর্শনার্থী ও পূজারিরা। পূজামণ্ডপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো কৈলাস পর্বতের কাহিনীর কিছু বিষয়, যা তুলে ধরা হচ্ছে সেখানে অবস্থিত একটি পুকুরের মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী দিব্যতনু দাসের নেতৃত্বে ১০ জন শিল্পী পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উঁচু টাওয়ারে প্রতিমাটি কৈলাস পর্বতের অংশবিশেষ স্থাপন করেছেন। যেখানে সবার ওপরে রয়েছে মহাদেব। এরপর রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমান। মহাদেব ও রামের হাত রয়েছে আশীর্বাদ করা অবস্থায়, যা দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। এ ছাড়া নারায়ণ অন্ত শয্যায় আছে ক্ষির সাগরে, শ্রীকৃষ্ণ পাগলা হাতি বধ, বকাশুর, কুরুক্ষেত্রে বিশ্বদেবের যুদ্ধ পরাজয়ের কাহিনী ও সমুদ্র মন্থনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
শিকদারবাড়ি দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলাল শিকদার বলেন, ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত এই পূজার শুরু থেকেই এলাকার মানুষের উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়ে আসছি। তাদের পরামর্শ ও উপদেশ আমার অনেক কাজে লাগছে। ২০১০ সালে ৩০১টি প্রতিমা নিয়ে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা শুরু হয়। গত বছর ছিল ৪৫১টি প্রতিমা। এ বছর আমরা ৬০১টি প্রতিমা নিয়ে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি।’ তিনি আরো জানান, ১৪ জন সহকারী নিয়ে ছয় মাস ধরে মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি করেছেন খুলনার কয়রা উপজেলার হাতিয়ারডাঙ্গা গ্রামের কারিগর বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়।
গত বৈশাখ মাস থেকে একটানা প্রতিমা গড়ার কাজ করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় বলেন, ‘বাগেরহাটে এ বছর বেশ কয়েকটি মন্দিরে শতাধিক প্রতিমার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপে রয়েছে ৬০১টি প্রতিমা। প্রতিমার সংখ্যা ও জাঁকজমকের দিক থেকে এটাই এ বছর এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় মণ্ডপ।’
লেখক : সাংবাদিক ও কবি