নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যাওয়া

ঈদের আগমন মানেই শহরের কোলাহল ফেলে নাড়ির টানে গ্রামের দিকে ছুটে যাওয়া। ইট-পাথরের জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ফিরে আসার এক অন্যরকম আনন্দ এই সময়ে।
গ্রামের মেঠোপথগুলো যেন এই ফিরে আসার গল্পই লেখে। পিচঢালা পথ ছেড়ে ধুলো মাখা মেঠোপথে পা রাখতেই মনটা কেমন যেন সজীব হয়ে ওঠে। চারপাশে সবুজের হাতছানি আর পাখির কলরব জানান দেয়, অপেক্ষা করছে আতিথেয়তার উষ্ণ পরশ।
ঈদের ছুটিতে গ্রামের টং দোকানগুলো পরিণত হয় মিলনমেলায়। শহরের কর্মব্যস্ত জীবনে যাদের সঙ্গে হয়তো দেখাই মেলে না, সেই বন্ধুদের সঙ্গে এখানে বসে চলে দীর্ঘ আড্ডা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন, স্কুল-কলেজের দিনগুলোর খুনসুটি আর বর্তমান জীবনের হালচাল নিয়ে গল্পগুলো যেন ফুরোতে চায় না। এ যেন পুরোনো দিনের খাতা নতুন করে খোলা।
আর মায়ের হাতের রান্না! ঈদের দিনে এর আবেদন বর্ণনাতীত। সকালের সেমাই থেকে শুরু করে দুপুর আর রাতের বিশেষ পদগুলো— সব কিছুতেই মিশে থাকে মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর মমতা। শহরে চাইলেই মায়ের হাতের এমন সুস্বাদু রান্না মেলে না, তাই গ্রামের ঈদ মানেই মায়ের হাতের অসাধারণ সব রান্নার স্বাদ নেওয়ার এক দারুণ সুযোগ।
পাশের বাড়িতে মাংস-রুটি খাওয়ার চল গ্রামের ঈদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঈদের দিন দুপুর থেকে বিভিন্ন বাড়িতে প্লেটে করে মাংস আর রুটি বিনিময় হয়। এ যেন শুধু খাবার বিনিময় নয়, ভালোবাসার আদান-প্রদান। এই ঐতিহ্যই গ্রামের প্রতিবেশীদের মধ্যে গড়ে তোলে এক নিবিড় সম্পর্ক। একে অন্যের খোঁজ নেওয়া, কুশল বিনিময় করা— এই সাধারণ কাজগুলোই ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে প্রতিবেশির খবর নেওয়ার সময় কোথায়? কিন্তু গ্রামে প্রতিবেশির অসুস্থতা থেকে শুরু করে যেকোনো ছোটখাটো ঘটনাও সবার কাছে খবর, সবার কাছে গুরুত্ব পায়। এ এক অন্যরকম সামাজিক বন্ধন।
ঈদের দিনে গ্রামের সরল জীবনযাত্রা, আন্তরিক আতিথেয়তা আর প্রতিটি সম্পর্কে উষ্ণতার ছোঁয়া মনকে ভরিয়ে তোলে। এই কটা দিনের জন্য গ্রামের মেঠোপথ, টং দোকান, মায়ের হাতের রান্না আর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো যেন এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে থাকে। শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসার এই ঈদ তাই শুধুই একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার, ভালোবাসা আর সজীবতা অনুভব করার এক অনন্য সুযোগ।
লেখক : সাংবাদিক