তরুণ তুর্কিদের বিপ্লবে উত্তাল নেপাল

নেপালে আবারও রাজনীতির অঙ্গনে ঝড় উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বৈরশাসন ও গণবিরোধী নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সম্প্রতি প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া—ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (পূর্বতন টুইটার)—নিষিদ্ধ করায় যেন আগুনে ঘি পড়েছে। নতুন প্রজন্মের হাতে যোগাযোগ ও প্রতিবাদের প্রধান হাতিয়ার কেড়ে নেওয়ায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে তরুণরা।

প্রেক্ষাপট: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষেধাজ্ঞার পেছনের কারণ
গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপাল সরকার ঘোষণা দেয়, দেশজুড়ে জনপ্রিয় সব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করা হবে। সরকার দাবি করে, এসব সংস্থা কাঠমান্ডু প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সরকারি নথিভুক্ত প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি। ২৬টি প্ল্যাটফর্মকে সাতদিনের সময়সীমা দিলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর পরেই ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে’ সরকার এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু এই যুক্তি জনগণ মানতে নারাজ। কারণ, নেপালের নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, এমনকি সংস্কৃতি চর্চার বড় অংশই সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।

আন্দোলনের বিস্তার ও রূপ
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নামে। বিশেষ করে ‘জেন জি’ প্রজন্মের হাজার হাজার মানুষ কাঠমান্ডুর রাস্তায় মিছিল-মহাসমাবেশ করে। তারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়া চালুর দাবিই জানায়নি, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন ও স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে।
প্রতিবাদীরা সংসদ ভবন ও প্রশাসনিক এলাকায় প্রবেশ করে। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ লাঠিচার্জ, জলকামান, টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে রাজধানীতে কারফিউ জারি হয়, সেনা নামানো হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে অন্তত ৮ তরুণ নিহত হন, আহত হন শতাধিক।

নেপালের এই সোশ্যাল মিডিয়া আন্দোলন নিছক প্রযুক্তি-নির্ভর প্রতিবাদ নয়, এটি রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্কের গভীর সংকটের প্রতিফলন। ইতিহাস প্রমাণ করে নেপালের তরুণ প্রজন্ম যখন রাস্তায় নামে, তখন রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।