যেসব কারণে এবার হজের খরচ বেড়েছে

সারা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশে এবছর হজের খরচ বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত খরচ বাড়ায় এবছর হজে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের যে কোটা রয়েছে, এখনো তার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। এ জন্য নিবন্ধনের সুযোগ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১৬ই মার্চ নির্ধারণ করেছে সরকার। হজের কোটা আদৌ পূরণ হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকলেও সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন, শেষ সপ্তাহে অনেক আগ্রহী নিবন্ধন করবেন। খবর বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বাকিদের যেতে হবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। তবে এবার হজের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিবন্ধন করা নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে হজের জন্য সরকারিভাবে হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরে সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। আর কোরবানি ছাড়া প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৪৯ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছরে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে ডলারের দাম বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়া, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজ প্যাকেজে বাড়িয়ে ধরতে হয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেছেন, ‘ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়া আর সৌদি আরবে মোয়াল্লেমসহ নানা খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকেও বাধ্য হয়ে হজের খরচ বাড়াতে হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের হাজিরা মক্কা-মদিনার কেন্দ্রস্থলে থাকতে চান, যাতে যাতায়াতে সুবিধা হয়। যেমন মদিনায় আমরা মারকাজি এলাকায় হাজিদের রাখার ব্যবস্থা করি। এই কারণে আমাদের খরচ বেশি পড়ে যায়।’
মো. মতিউল ইসলাম আরও বলেন, ‘আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছরে সৌদি আরবে খাবার, মোয়াল্লেম, আবাসনসহ সব খরচ বেড়েছে। বিমান ভাড়াও অনেক বেশি। এসব কারণে হজ প্যাকেজের খরচ বাড়াতে হয়েছে। বিমানভাড়া বাদে অন্য বেশিরভাগ খরচই কিন্তু সৌদি আরবে। সেখানকার খরচ আমাদের যেমন, অন্যসব দেশের জন্যও একই হওয়ার কথা।’
হাবের মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার বলেন, ‘সৌদি আরবে সব খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলারের বিনিময় মূল্য আর বিমান ভাড়া অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে হজের খরচ বেশি বেড়েছে। সৌদি আরবের খরচ নিয়ে আমাদের তো কিছু করার নেই। কিন্তু বিমান ভাড়ার কারণে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ বিমানও হজের সময় মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে থাকে। তারা বিমান ভাড়া কম নিলে হজের খরচও কমে যেতো।’
অবশ্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বলছে, সার্বিক পরিস্থিতি ও খরচ বিবেচনা করেই বিমান ভাড়া ঠিক করা হয়েছে যাতে বিমানের লাভ হবে না, তবে লোকসান এড়ানো সম্ভব হবে।
তবে এভিয়েশন বিশ্লেষকরা মনে করেন, হজ যাত্রীদের জিম্মি করে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সকে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই ভাড়া আকাশচুম্বী করা হয়েছে।