কালের সাক্ষী মাগুরার বায়তুন নূর জামে মসজিদ

মাগুরার শালিখা উপজেলার গোপালগ্রামে অবস্থিত বায়তুন নূর জামে মসজিদ। প্রাচীন এই মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায়। যদিও নির্দিষ্ট সময়কাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, এটি মাগুরা জেলার প্রথম মসজিদ। যা দীর্ঘ কয়েকশ বছর ধরে টিকে আছে। প্রাচীন ইটের তৈরী, বিশাল গম্বুজ, দেয়ালে খোদাই করা নকশা, আর জীর্ণশীর্ণ মিনারগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় এটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ইতিহাসের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
বায়তুন নূর জামে মসজিদের একজন প্রবীণ মুসল্লী আব্দুল হালিম শিকদার বলেন, এটি এতটাই পুরোনো যে তাদের পুর্বপুরুষরাও এর প্রকৃত ইতিহাস জানতেন না। তিনি বলেন, আমার বয়স ৭৫ বছর। আমি এখানে ছোট বেলা থেকে নামাজ পড়ি। মসজিদটি মুঘল আমলে তৈরী করা বলে বাপ দাদার কাছে শুনে আসছি।
কয়েকজন মুসল্লি জানান, এই মসজিদটি মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে নির্মিত হয়। তৎকালীন সমাজচিন্তক কলিম উদ্দিন শিকদার ও কাতলী গ্রামের জমিদার শাহসুফি জমির উদ্দিন এর আহ্বানে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে।
মসজিদটি ৬০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া। চারপাশে ৪০ ইঞ্চি পুরু টালি ইটের দেয়াল। দেয়ালে রয়েছে ফুল, লতাপাতা, পদ্ম ও শিউলির খোদাই। আরবী ও উর্দুতে লেখা প্রাচীন ইসলামী গজল। দেয়ালের কারুকাজ ঝাপসা হয়ে গেছে। চারটি মিনারের তিনটি ভেঙে পড়েছে। অনেক দরজা জানালা অকেজো হয়ে গেছে।
মসজিদ কমিটির একজন সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন আফসোস করে বলেন, “সরকারিভাবে যদি এর সংরক্ষণ করা হতো, তাহলে ভালো হতো। দূর দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন।
স্থানীয় এক যুবক নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, প্রথম দিকে এই মসজিদে মাত্র ৩০/৩৫ জন মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে পারতেন। তখন এটি ছিল অনেক ছোট। স্থানীয়দের উদ্যোগে মসজিদের আশপাশে কিছু অংশ সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এখন এখানে ২০০-৩০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তারা বলেন, মসজিদটি আমাদের গর্ব। শুধু গ্রামের মানুষ নয়, বাইরের লোকেরাও এখানে আসেন। যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করে। সরকারিভাবে যদি এটি সংষ্কার ও সংরক্ষণ করা হয়, তবে এটি ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে নয়, ঐতিহ্যবাহী পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি পাবে।