ক্ষেতলালের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য নিদর্শন হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ

ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ। জেলা শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের হিন্দা গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত।
বাংলা ১৩৬৫ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৯৫ ফুট ও প্রস্থ ২২৫ ফুট। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের সঙ্গে মিল রেখে, পাঁচটি গম্বুজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদটি। বড় গম্বুজটি রয়েছে মাঝখানে, বাকি চারটি গম্বুজ রয়েছে চার কোনায়, যা বড় গম্বুজটির সঙ্গে সংযুক্ত। মসজিদটি নির্মাণে কোনো লোহার রড ব্যবহার করা হয়নি। কাচ, চিনামাটি ও মোজাইকের মাধ্যমে মুঘল স্থাপত্য শিল্পের অনুকরণে মসজিদটির দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মসজিদটির উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে চার তলাবিশিষ্ট ৪০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। সেখান থেকে আজানের ধ্বনি মুসল্লিদের নামাজের আহ্বান জানায়।
মসজিদটির বর্তমান পেশ ঈমাম মাওলানা মো. রবিউল হাসান বলেন, বাগমারী পীর হিসাবে পরিচিত চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর মোহাম্মদ আব্দুল গফুর চিশতী (রহ.) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থেকে ষাটের দশকে এই এলাকায় এসে আস্তানা গড়ে তোলেন। তারই নির্দেশে মাওলানা আব্দুল খালেক চিশতীর তত্ত্বাবধানে হযরত আব্দুল কাদের নিজে নকশা তৈরি ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে তিন বছর সময় লাগে এবং বাংলা ১৩৬৫ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
মসজিদে প্রায় ৪০০ জন মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখে মসজিদ চত্বরে ওরস উপলক্ষে হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয় এবং হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
এই মসজিদের দেয়ালে বিভিন্ন রঙের কাচ, মার্বেল পাথর ও সিরামিকের টুকরো বসিয়ে অলঙ্করণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মসজিদটির নির্মাণ কৌশল দেখে অভিভূত হন মসজিদটি দেখতে আসা সাধারণ দর্শনার্থীরা। সূর্যের আলোয় মসজিদটির ঝলমলে নজরকাড়া রূপ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন ও চোখ জুড়ানো হওয়ায় দূর-দূরান্তের বহু মানুষ নিময়মিত নামাজ পড়তে আসেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত নারী-পুরুষ মসজিদটি দেখতে আসেন।
হিন্দা কসবা শাহী জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম বলেন, বহু বছর আগে নির্মিত ঐতিহাসিক এ মসজিদের ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন ধরে রাখতে মসজিদটির চারপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ এবং বিভিন্ন সংষ্কার কাজ করা হচ্ছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন তিনি।