‘বাংলা ও বাঙালির জাতীয় পরিচয়ের কবি জসীম উদদীন’

জসীম উদদীনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ ও ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ বাঙালির ইলিয়াড ও অডিসি, রামায়ণ ও মহাভারত। কেননা ইলিয়াড ও অডিসি যেমনভাবে গ্রিক সভ্যতার প্রতিভূ, রামায়ণ ও মহাভারত যেমনভাবে ভারতীয় সভ্যতার প্রকাশ, ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ ও ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ঠিক সেই প্রকারেই বাংলাদেশ ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের দলিল। ‘বাংলা ও বাঙালির কবি’ জসীম উদদীনকে নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে কবি জসীম উদ্দীনের জন্মদিন উপলক্ষে ‘বাংলা ও বাঙালির কবি’ শিরোনামে ‘কালের ধ্বনি’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রাবন্ধিক আশিক রেজার সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। এ ছাড়া আলোচক ছিলেন গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন ও প্রাবন্ধিক কুদরত-ই-হুদা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্পাদক ইমরান মাহফুজ।
গত ১ জানুয়ারি এই বরেণ্যকবির জন্মদিন থাকলেও কোনো আলোচনা অনুষ্ঠান না হওয়ায় আলোচকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কবি জসীম উদদীন সমগ্রবাংলা সাহিত্যে বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি রবীন্দ্র ও নজরুল উত্তর যুগে একজন শক্তিমান কবি।
আলোচকরা আরো বলেন, জসীম উদদীন মূলত মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতার সাঁকো বা বন্ধন। বিশ্বগ্রামের যুগে কেউ জসীম উদদীনকে পল্লীকবি হিসেবে প্রচার করলে তা হবে সাহিত্যচিন্তার চরম সংকীর্ণতা। তিনি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের প্রাত্যহিক ভাবনাকে আধুনিক মনে অমায়িক দরদ দিয়ে বাঙালি জীবন বর্ণনা করেছেন। আর কালের ধ্বনি নতুন চিন্তাকে সবার মাঝে তুলে ধরেছে। যেটি অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। সম্পাদনাটি সৃজনশীল ও একাডেমিকদের কাজে লাগবে।
আলোচনা শেষে পত্রিকাটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর ৫৩টি প্রবন্ধে সৃজনশীল ও মননশীল লেখকদের চিন্তায় দারুণভাবে উঠে এসেছে অজানা জসীম উদদীন। দুষ্প্রাপ্য ছবি, চিঠিসহ নির্বাচিত লেখাগুলো দিয়ে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার প্রকাশনাটি দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।