পর্ব ৩
দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস

অনুবাদ : সালেহ মোহাম্মদ
আফতাবের জীবনের প্রথম কয়েক বছরে, জাহানারা বেগমের গোপনীয়তাটি নিরাপদে ছিল। তিনি অপেক্ষা করছিলেন আফতাবের নারী-অঙ্গটি সেরে যাওয়ার জন্য। একই সময়ে তিনি পুত্রকে সব সময় কাছে কাছে রাখতেন এবং তার ব্যাপারে হিংস্রভাবে রক্ষণমূলক ছিলেন। এমনকি তার ছোট ছেলে, সাকিব, জন্মানোর পরও তিনি নিজের কাছ থেকে বেশিদূরে আফতাবকে একা একা যেতে দিতেন না। একজন মহিলা, যিনি এত দিন ধরে এত দুশ্চিন্তার সাথে একটি পুত্রের জন্য অপেক্ষা করেছেন, তাঁর জন্য এ ধরনের আচরণকে খুব একটা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখা হতো না।
আফতাবের বয়স যখন পাঁচ সে চুড়িওয়ালি গলিতে ছেলেদের উর্দু-হিন্দি মাদ্রাসায় পড়তে যেতে শুরু করল। এক বছরের মধ্যে সে কোরআনের একটা ভালো পরিমাণ অংশ আরবিতে তিলওয়াত করতে পারত, যদিও এটা পরিষ্কার নয় যে তার কতটুকু সে বুঝতে পারত—তবে সেটা সত্য ছিল অন্য বাচ্চাগুলোর ব্যাপারেও। আফতাব সাধারণের থেকে ভালো ছাত্র ছিল, কিন্তু সে যখন খুব ছোট তখন থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে তার আসল গুণ হলো সংগীতে। তার একটা মিষ্টি, প্রকৃত গান গাওয়ার কণ্ঠ ছিল এবং মাত্র একবার শুনেই সে একটা সুরকে তুলে নিতে পারত। তার বাবা-মা ঠিক করল তাকে ওস্তাদ হামিদ খানের কাছে পাঠানোর, একজন অসামান্য কমবয়স্ক সংগীতজ্ঞ যিনি চাদনী মহলে তার সংকীর্ণ ঘরগুলোতে বাচ্চাদের দলগুলোকে ভারতীয় ক্লাসিকাল সংগীত শেখাতেন। ছোট আফতাব কোনোদিন একটা ক্লাসও বাদ দিত না। যখন তার বয়স নয় হয়েছে, সে রাগ ইয়ামান, দুর্গা আর ভৈরবীতে বাড়া খায়াল-এর পুরো একটি বিশ মিনিটের মতো অংশ গাইতে পারত আর রাগ পুরিয়া ধানাশ্রির সমতল রেখাবটি থেকে তার কণ্ঠকে আলতো করে উঠিয়ে নিতে পারত যেন পুকুরের জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে একটা পাথরের টুকরা লাফিয়ে চলে যাচ্ছে। লক্ষ্ণৌর একজন রাজ-গণিকার দক্ষতা আর ভঙ্গিমা নিয়ে সে চৈতী আর ঠুমরী গাইতে পারত। প্রথমদিকে লোকজন মুগ্ধ হতো এবং এমনকি উৎসাহও দিত, কিন্তু শীঘ্রই অন্য ছেলেমেয়েদের ঠাট্টা আর জ্বালাতনটি শুরু হয়ে গেল : ও একটা মেয়ে। ও মেয়েও না ছেলেও না। ও একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। মেয়ে-ছেলে। ছেলে-মেয়ে হে! হে! হে!
জ্বালাতন যখন সহ্যাতীত হয়ে উঠল আফতাব তার সংগীতের ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিল। কিন্তু ওস্তাদ হামিদ খান, যিনি খুব ভালোবাসতেন তাকে, নিজে নিজে তাকে আলাদা করে শেখাতে চাইলেন। তাই সংগীতের ক্লাসগুলো চালু থাকল, কিন্তু আফতাব আর স্কুলে যেতে চাইত না। ততদিনে জাহানারা বেগমের আশাগুলো কম বেশি ম্লান হয়ে গেছে। দিগন্তের কোথাও সেরে যাওয়ার কোনো ইশারা নেই। কিছু সৃষ্টিশীল অজুহাত তৈরি করে তিনি গত কয়েক বছর আফতাবের খৎনার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। কিন্তু ছোট সাকিব তারটার জন্য লাইনে আপেক্ষা করছিল এবং তিনি জানতেন তার সময় ফুরিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তার যা করার ছিল তাই করলেন। তিনি অন্তরে সাহস সঞ্চয় করলেন আর তার স্বামীকে জানালেন, শোকে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ে এবং একই সাথে এই শান্তির সাথে যে অবশেষে তার অন্য কেউ একজন আছে যার সাথে তিনি তার দুঃস্বপ্নকে ভাগ করে নিতে পারছেন।
তার স্বামী, মুলাকাত আলি, ছিল একজন হাকিম, ভেষজ চিকিৎসার একজন ডাক্তার, এবং উর্দু ও পারশিয়ান কাব্যের এক প্রেমিক। তার সারাটা জীবন তিনি আরেকজন হাকিমের পরিবারের জন্য কাজ করেছেন—হাকিম আবদুল মাজিদ, যিনি ‘রূহ আফজা’ (পারশিয়ানে আত্মার মহৌষধ) নামক একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের শরবতের উদ্যোক্তা ছিলেন। রুহ আফজা, যা তৈরি হতো খুরফার বিচি, আঙুর, কমলা, তরমুজ, পুদিনা, গাজর, সামান্য পালংশাক, খুস খুস, শাপলা, দুই ধরনের লিলি আর দামাস্কর গোলাপের নির্যাস থেকে, বানানো হয়েছিল একপ্রকার টনিক হিসেবে। কিন্তু লোকজন দেখল যে ঝিকমিকে রুবি-রঙের তরলটির দুই টেবিল চামচ একগ্লাস ঠান্ডা দুধে বা সাধারণ পানিতে মেশালে শুধু স্বাদেই চমৎকার লাগে না বরঞ্চ দিল্লির আগুনের মতো গ্রীষ্ম এবং মরুভূমির বাতাসে বহমান অদ্ভুত জ্বরজারিগুলোর বিরুদ্ধে সেটি একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা। দ্রুতই যার সূচনা ঘটেছিল ঔষধ হিসেবে তা হয়ে গেল ওই এলাকার একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন পানীয়। রুহ আফজা হয়ে উঠল একটি বর্ধিষ্ণু ব্যবসা এবং একটি সাংসারিক নাম। চল্লিশ বছর ধরে এটি বাজার শাসন করল, তারা হেডকোয়ার্টার থেকে পণ্য পাঠাত পুরাতন শহরে অনেক দক্ষিণে সেই হায়দারাবাদ পর্যন্ত এবং অনেক পশ্চিমে সেই আফগানিস্তান পর্যন্ত।
এর পর এলো দেশভাগ। ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যকার নতুন সীমানায় ঈশ্বরের কণ্ঠের ধমনীটি ফেটে খুলে গেল এবং লাখ লাখে মানুষ মারা গেল ঘৃণাজনিত কারণে। প্রতিবেশীরা দাঁড়িয়ে গেল একে অন্যের বিপক্ষে, যেন তারা কোনোদিন একে অন্যকে চিনত না, কখনো একে অন্যের বিয়েতে যাইনি, কখনো গায়নি একে অন্যের গান। দেয়ালঘেরা শহরটা ভেঙে খুলে গেল। পুরান পরিবারগুলো (মুসলিম) পালাল। নতুনরা (হিন্দুরা) এসে পৌঁছাল আর সংসার পাতাল শহরের দেয়ালগুলোর আশপাশে। রুফ আফজা বেশ ভালোভাবেই পিছিয়ে পড়ল, তবে সামলে নিল দ্রুতই আর পাকিস্তানে একটা শাখা খুলল। শতাব্দীর এক সিকিভাগ পার হলে, পূর্ব পাকিস্তানে ঘটা নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞটির পর, এটি বাংলাদেশের আনকোড়া নতুন রাষ্ট্রটিতে একটি নতুন শাখা খুলল। তবে শেষমেশ, যে আত্মার মহৌষধটি টিকে থেকেছে যুদ্ধ আর তিনটি দেশের রক্তস্নাত জন্মের মধ্য দিয়ে, ধরা খেয়ে গেল, পৃথিবীর অন্য আর সবকিছুর মতোই, কোকা-কোলার কাছে।
যদিও মুলাকাত আলি একজন বিশ্বস্ত আর মূল্যায়িত কর্মচারী ছিলেন হাকিম আব্দুল মজিদের, যে বেতন তিনি পেতেন তা সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই তার কর্মঘণ্টাগুলোর বাইরের সময়টাতে তিনি বাসায় রোগী দেখতেন। তার সাদা সুতির গান্ধী টুপি বানানোর আয় থেকে জাহানারা বেগম সংসারের ইনকামে যোগ করতেন, যেগুলো তিনি চাদনী চকের হিন্দু দোকানদারদের কাছে পাঠাতেন স্তূপে স্তূপে।
মুলাকাত আলি তার পারিবারিক বংশরেখাটিকে চিহ্নিত করতে পারতেন সরাসরি মঙ্গোলীয় সম্রাট চেঙ্গিস খান পর্যন্ত। তার মাধ্যমটি ছিল সম্রাটের দ্বিতীয় পুত্র চাগাতাই। মুলাকাত আলির কাছে ছিল ফাটা ফাটা একটি চর্মখণ্ডের ওপর অঙ্কিত বিশদ এক বংশলতিকা আর একটি ছোট টিনের ট্রাঙ্কভর্তি ছেঁড়া, হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজের টুকরা যেগুলো তিনি বিশ্বাস করতেন যে তার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে আর ব্যাখ্যা করে কীভাবে গোবি মরুভূমি থেকে শামানের বংশধররা, অন্তহীন নীল আকাশের উপাসকরা, যাদেরকে একসময় ইসলামের শত্রু মনে করা হতো, হয়ে গেল সেই মোগল সাম্রাজ্যের পূর্বপুরুষ যারা শত শত বছর ভারতকে শাসন করেছিল, আর কীভাবে মুলাকাত আলির নিজের পরিবার, বংশধর সেই মোঘলদের, যারা ছিল সুন্নি, হয়ে গেল শিয়া। হঠাৎ হঠাৎ, হয়তো প্রতি কয়েক বছরে একবার, তিনি তার ট্রাঙ্কটি খুলবেন আর তার কাগজগুলো দেখাবেন কোন বেড়াতে আসা সাংবাদিককে যিনি, অধিকাংশ সময়ই, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেনও না বা তাকে গুরুত্বসহকারেও নেবেন না। খুব বেশি হলে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি একটি কৌতুকপূর্ণ, অদ্ভুত উল্লেখ্য হিসেবে পুরাতন দিল্লির ওপর সপ্তাহান্তের বিশেষ সংখ্যায় জায়গা পেতে পারে। যদি আয়োজনটি দুই পাতা জুড়ে হয় সেক্ষেত্রে, মুলাকাত আলির একটি ক্ষুদ্র পোর্ট্রেটও থাকতে পারে সেখানে, সাথে মোগলদের রান্নাঘরের কিছু কাছ থেকে তোলা ছবি, সরু নোংরা গলিগুলোতে স্তূপ করে থাকা সাইকেল রিকশায় বসা বোরখা পরা মহিলাদের দূর থেকে তোলা ছবি, এবং অবশ্যই সেই অতিআবশ্যকীয় ওপর থেকে তোলা সাদা টুপি মাথায় হাজার হাজার মুসলিম লোকদের ছবি, নিঁখুত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, জামা মসজিদের জামাতের নামাজে রুকু করছে। কিছু পাঠক এই ছবিগুলোকে ইহবাদ ও অন্য ধর্মমত সহিষ্ণুতার ব্যাপারে ভারতের একনিষ্ঠতার সাফল্যের প্রমাণ হিসেবে দেখতেন। অন্যরা তার মধ্যে একটি ঈষৎ প্রশান্তি মিশ্রিত করতেন যে দিল্লির মুসলিম জনতাকে দেখে মনে হচ্ছে তারা তাদের প্রাণচঞ্চল পাড়াটিতে যথেষ্ট সুখেই আছে। তার পরেও অন্যরা ছিল যারা এগুলোকে দেখত প্রমাণ হিসেবে যে মুসলিমরা স্বাভাবিক মানুষদের সাথে মিলে নিজেদের ‘জাতিগতভাবে পূর্ণ’ করে তোলার কোনো ইচ্ছা রাখে না এবং তারা ব্যস্ত রয়েছে সন্তান উৎপাদনে ও নিজেদেরকে গোছানোতে, আর শীঘ্রই তারা একটা হুমকি হয়ে উঠবে হিন্দু ভারতের জন্যে। এই মতবাদটির অংশীদাররা একটি আশংকাজনক হারে প্রভাব বিস্তার করছিলেন।
খবরের কাগজে কি আসল বা আসল না কি ছাপা হতো কি ছাপা হতো না। সেই বিবেচনায় না গিয়ে, অপসৃয়মাণ স্মরণশক্তি বা অতি অনুরাগবশত মুলাকাত আলি তার ক্ষুদ্র ঘরগুলোতে অতিথিদের স্বাগত জানাতেন একজন পদমর্যাদাবান ব্যক্তির ম্লান মাধুর্য নিয়ে। তিনি অতীত নিয়ে আলোচনা করতেন দম্ভের সাথে কিন্তু কখনই ব্যাকুলতার সাথে নয়। তিনি বর্ণনা করতেন কীভাবে, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে, তার পূর্বপুরুষরা একটি সাম্রাজ্য শাসন করেছে যার বিস্তৃতি ছিল যেই দেশগুলো আজকে নিজেদের ডাকে ভিয়েতনাম আর কোরিয়া—তাদের থেকে শুরু করে সেই হাঙ্গেরী আর বলকান পর্যন্ত, উত্তরের সাইবেরিয়া থেকে শুরু করে ভারতের ডেকান মালভূমি পর্যন্ত, যার থেকে বড় কোন সাম্রাজ্য এই বিশ্ব কোনোদিন দেখেনি। তিনি বেশির ভাগ সময়েই সাক্ষাৎকারটি সমাপ্ত করতেন তার প্রিয় কবিদের একজন মীর ত্বাকী মীরের একটি দ্বিপদী উর্দু পঙক্তিমালার আবৃত্তি দিয়ে :
জিস সার কো ঘুরুর আজ হ্যায় ইয়ে তাজ ভারি কা
কাল উস পে ইয়াহি শোর হ্যায় ফির নওহাগারি কা
যে মস্তক আজ প্রবল দম্ভে মুকুট শোভিত করে
আগামীকাল সে, ঠিক এখানেই, মহাশোকে ডুবে মরে
তার অধিকাংশ অতিথিরা, একটি নতুন শাসকশ্রেণির দুর্বিনিত গুপ্তচররা, নিজেদের যৌবনজনিত অহমিকার ব্যাপারে অসচেতন যারা, তার ঠিক পুরোপুরি ধরতে পারতেন না তাদের কাছে এই মাত্র নিবেদিত দ্বিপদী কাব্যটির অন্তর্নিহিত অর্থটি কী, যেন কোন তেলে ভাজা খাবার যেটাকে একটি কাপের আংটা ধরে মিষ্টি ঘন চা পানের মাধ্যমে গলা দিয়ে নামাতে হচ্ছে। এটুকু তারা অবশ্যই বুঝতেন যে এটি ছিল একটি শোকগীতি কোন পতিত সম্রাটের জন্য যার আন্তর্জাতিক সীমানাগুলো সংকুচিত হতে হতে একটা জীর্ণ বস্তিতে এসে ঠেকেছে। সেই বস্তির চতুর্পাশ একটি পুরাতন শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত দেয়াল দিয়ে ঘেরা। আর হ্যাঁ, এটুকুও তারা বুঝত যে একই সাথে মুলাকাত আলির নিজের দারিদ্রপীড়িত অবস্থা নিয়ে এটি একটি অনুতাপমূলক মন্তব্য ছিল। তাদের কাছে যেটা ধরা দিত না তা হল যে এই দ্বিপদী কাব্যটি ছিল একটি চতুর জলখাবার, একটি ছলনাময় সমুচা, বিলাপে জড়ানো একটি সাবধানবাণী, বেখাপ্পা বিনম্রতায় যাকে নিবেদন করছেন একজন যথেষ্ট বুদ্ধিমান লোক যার পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস ছিল তার শ্রোতাদের উর্দুর অজ্ঞতা নিয়ে, একটি ভাষা যেটি, যারা তাতে কথা বলত তাদের মতই, ধীরে ধীরে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছিল।
মুলাকাত আলির কাব্যের প্রতি অনুরাগটি তার হাকিমের পেশা থেকে ভিন্ন একটি শখমাত্র ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন যে কবিতা সারিয়ে তুলতে পারে, অথবা সারিয়ে তোলার পথে অনেক দূর যেতে পারে। তিনি তার রোগীদেরকে কবিতার পরামর্শ দিতেন যেভাবে অন্য হাকিমরা তাদের রোগীদেরকে পরামর্শ দিতেন ঔষধের। তিনি তার বিপুল সংগ্রহ থেকে সবসময়ই একটি দ্বিপদী কাব্য বের করে আনতে পারতেন যেটা রহস্যজনকভাবে যথাযথ ছিল প্রত্যেক অসুস্থতা, প্রত্যেক ঘটনা, প্রত্যেক মেজাজ এবং প্রত্যেক রাজনৈতিক আবহাওয়ার সূক্ষ পরিবর্তনের জন্য। তার এই অভ্যাসটি তার আশেপাশের জীবনকে অনেক বেশি প্রগাঢ় করে তুলত এবং সেই একই সময়ে জীবনের স্বতন্ত্রতাকে কমিয়ে দিত।
এটা সবকিছুর মধ্যে একপ্রকার ঔদাসীন্যতার বোধ ঢুকিয়ে দিত, একটা বোধ যে যা কিছু ঘটেছে তা সব ঘটে গেছে আরো আগেই। যে সেগুলো ইতোমধ্যেই লেখা হয়ে গেছে, গাওয়া হয়ে গেছে, তাদের নিয়ে মন্তব্য করা হয়ে গেছে এবং তাদের প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে ইতিহাসের সংগ্রহশালায়। যে নতুন কোন কিছু নেই যা সম্ভব। এটা একটা কারণ হতে পারে যে কেন তার আশপাশের কমবয়সীরা প্রায়ই পালিয়ে যেত, হি হি করে হাসতে হাসতে, যখন তারা বুঝত যে একটি দ্বিপদী কাব্য এখন সমাগত।
যখন জাহানারা বেগম তাকে আফতাবের ব্যাপারে বললেন, সম্ভবত জীবনে প্রথমবারের মতো মুলাকাত আলির কাছে পরিস্থিতির উপযুক্ত কোন দ্বিপদী কবিতা ছিল না। প্রাথমিক ধাক্কাটি সামলে নিতে তার কিছুক্ষণ সময় লাগল। সামলে নেয়ার পর, আগে তাকে না জানানোর জন্য তিনি স্ত্রীকে খুব বকা দিলেন। সময় বদলে গেছে, তিনি বললেন। এটা আধুনিক জামানা। তিনি নিশ্চিত ছিলেন তাদের পুত্রের সমস্যাটির জন্য কোনো সরল বৈজ্ঞানিক সমাধান আছে। তারা নিউ দিল্লিতে এখন ডাক্তার খুঁজে বের করবেন, পুরাতন শহরের এই মহল্লায় যে ফিসফাস আর গুজব চলে তার থেকে বহুদূরে। সর্বশক্তিমান তাদেরই সহায়তা করে যারা নিজেদের সাহায্য করে, তিনি স্ত্রীকে জানালেন একটু কড়াভাবে।
(চলবে)
(সালেহ মোহাম্মদ অনূদিত বইটি প্রকাশ করছে ‘চারদিক’)