আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব
‘জীবনানন্দ বিশ্বপাঠককে আকৃষ্ট করেছে’

অমর একুশে এবং বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বুধবার বাংলা একাডেমিতে স্লোভাকিয়া, মরক্কো, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশের কবিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। সকাল ১০টায় উৎসবের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। এতে বাংলা কবিতার অতীত ও সাম্প্রতিক ধারা বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশের কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। জীবনানন্দ দাশের কবিতা অনুবাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ গবেষক জো উইন্টার। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সঞ্চালনা করেন কবি আসাদ চৌধুরী ও কবি-অনুবাদক কায়সার হক।
মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ‘বাংলাদেশের কবিতা চল্লিশ দশক থেকে সাম্প্রতিক শূন্য দশক পর্যন্ত বিভিন্ন মাত্রা উন্নীত করে বিশ্বকবিতার ধারায় ক্রমে সাবলীলভাবে যুক্ত হয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এ দেশের কবিতার এক বড় প্রভাবক। নানা ধরনের নিরীক্ষাকে আলিঙ্গন করে আমাদের কবিতা মানুষের মুক্তির অঙ্গীকার ধারণপূর্বক নতুন দিকে ধাবিত হচ্ছে।’
জো উইন্টার তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ মানুষের মনের ধূসর অঞ্চলে তাঁর কবিতার আলো ফেলেছেন, যা বাংলার সীমানা পেরিয়ে বিশ্বপাঠককে আকৃষ্ট করেছে।’
এ অধিবেশনে কবিতাপাঠে অংশ নেন সুইডেনের কবি বেন্ত বার্গ, স্লোভাকিয়ার কবি মিলান রিচার, মরক্কোর কবি বেনাইসা বোমালা, নরওয়ের কবি এরলিং কিতেনসেন, তাইওয়ানের কবি লি কুই-শিন, লিন ফো-অর, লি রিও-ইয়াং, ড. ফাং ইয়া-চিন, তাই চিন-চো, চিন জিউ-জেন, নেপালের কবি বিধান আচার্য, চেট নাথ ক্যানেল প্রমুখ।
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘ভাষা আমাদের বিভক্ত করে আর কবিতা আমাদের একতাবদ্ধ করে। কবিতার শুদ্ধ শব্দে আমরা জীবনে চলার আলো সঞ্চয় করি।’ তিনি বলেন, ‘চেক থেকে বাংলাদেশের সব জায়গাতেই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে কবিদের যেতে হয়েছে। এই দুঃস্বপ্নের রাত পেরিয়ে আলোকিত ভোরের ঠিকানা কবিরাই দিতে পারেন বিশ্বজুড়ে।’
গতকাল বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে কবিতা উৎসবের দ্বিতীয় অধিবেশনে কবিতা পাঠে অংশ নেন সুইডেনের কবি লার্স হেগার, লত্তে সেদেরহোলম, ভারতের কবি রাসবিহারী দত্ত, আনসার উল হক, বাংলাদেশের কবি রুবী রহমান, কবি আলতাফ হোসেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মুহাম্মদ সামাদ, আনোয়ারা সৈয়দ হক, অসীম সাহা, জাহিদুল হক, শিহাব সরকার, আসলাম সানী, তারিক সুজাত, টোকন ঠাকুর ও পিয়াস মজিদ। এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। সভাপতিত্ব করেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অধিবেশন সঞ্চালনা করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ।
কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘অমর একুশে এবং বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব আয়োজন করে বাংলা একাডেমি বিভিন্ন মহাদেশের কবিদের মেলবন্ধনের সুযোগ করে দিয়েছে। কবিতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ভাষার শব্দশিল্পীরা মানুষের ভেতর স্বপ্নের পলি ও নুন সঞ্চার করে চলেছেন। এ স্বপ্ন সত্য হলে পৃথিবীও হয়ে উঠবে সব মানুষের যথাযথ বাসযোগ্য।’
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা।