রাজ কমল ঝায়ের গল্প
উঁচুতে উঠতে নিশ্চয়ই ভয় নেই আপনার

(রাজ কমল ঝা ভারতের কথাসাহিত্যিক। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই লেখক দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক। ১৯৬৬ সালে বিহারের ভাগালপুরে জন্ম নেওয়া রাজ কমলের উল্লেখযোগ্য বই হলো—শি উইল বিল্ড হিম আ সিটি, দ্য ব্লু বেডস্প্রেড, ফায়ারপ্রুফ, ইফ ইউ আর অ্যাফ্রেইড অব হাইটস প্রভৃতি।)
এটি একটি পুরুষের কণ্ঠস্বর। দুপুর হওয়ার আধঘণ্টা আগের ঘটনা। এক দঙ্গল মানুষ তার কণ্ঠস্বর শুনছে। সেও আছে তাদের মধ্যে; একমাত্র নারী।
‘‘প্রিয় ভাই ও বোনেরা
আপনাদের যদি উচ্চতা-ভীতি থাকে, তাহলে আমি কিছু দেখাতে পারব না। যাঁরা ভয় পাবেন, তাঁরা চলে যান। কিন্তু উচ্চতাকে যদি ভয় না করে কত ওপরে উঠতে চান, তা দেখার ইচ্ছে করেন, যদি দেখতে চান রাস্তাটাকে ফিতার মতো লাগছে কি না, যদি দেখতে চান মানুষগুলোকে বিন্দুর মতো লাগছে কি না, তাহলে আমার কথা শুনুন। আমি এখন আপনাদের বলতে যাচ্ছি, কীভাবে আপনি আমার পাখিটার পিঠে উঠে সারা শহর ঘুরে দেখতে পারেন। শহরের আগে-পিছে-ওপরে-মধ্যে। কোনো চাপ নেই, কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কোনো দুঃখ নেই। জাগতিক পৃথিবীর কোনো ময়লা-আবর্জনা আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। কেননা, পথ চলতে যেমন ময়লা দেখে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটতে হয়, তেমন করে চলতে হবে না। সংক্ষেপে এটুকুই বলতে চাই বন্ধুরা, কোনো যন্ত্রণা নেই।
আপনাকে উড়িয়ে আনব যেখানে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে ডানে দুইশ তিপ্পান্ন বাই পাঁচ বিডন রোডে। পিন কোড : সেভেন সেভেন জিরো জিরো সিক্স। মিত্র সিনেমা হল থাকবে আমাদের সামনে এবং নিচে আমার ডান পাশে, এখন আপনারা কী দেখতে পাচ্ছেন? এটা হলো আমার পাখি। সে এখন খাঁচায় আছে। কিন্তু না, তার মন একটুও খারাপ নয়। কারণ, সে আপনাদের সেবার জন্য নিয়োজিত আছে।
আমি তাকে ধরে ঝুলিয়ে দেব। আপনারা একটুও উৎকণ্ঠিত হবেন না। খালি খেয়াল রাখবেন আপনারা উড়তে পারছেন কি না। আপনাদের পা পাখির পিঠের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকবে। শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হবে। আপনারা ভাববেন, ঘোড়ার পিঠে চড়ছেন। পাখিটা একটা ঘোড়া আর আপনার আরোহী। জকিদের মতো আপনারা। যেমন রেসকোর্স ময়দানে বড়লোকেরা আসে শীতের সানডেতে, চোখে কালো চশমা পরে। গাড়িগুলোকে মাঠির মধ্যে ঘষা দিয়ে পার্ক করে। তেমন ভাববেন নিজেদের।’’
এটি অবশ্যই একটি পুরুষের কণ্ঠস্বর। দুপুর হওয়ার আধঘণ্টা আগে সমবেত জনতা তার কথা শুনছে। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ কি ষাটজন জড়ো হয়েছে সেখানে। এখানে আছেন সেইসব মানুষ, যাদের হাতে অফুরন্ত সময়। একটু দূরে বিশ কি ত্রিশ গজ দূরে ভিড়ের পেছনে একটি নারী ও তার শিশু।
নারীটির হাত কালো, নখ এবড়োখেবড়ো বাঁকা। হাতে অজস্র ভাঁজ। সম্ভবত একটু আগেই সে বাসনপত্র ধুয়েছে। শিশুটি ছেলে। সাত থেকে আট বছর । গায়ে শার্ট। আর হাফপ্যান্ট পরা। শার্টটি কোমরের কাছটায় একটু কোঁচকানো। সম্ভবত প্যান্টের ভেতরে ঢোকানো ছিল, তাই। এখন বের করা অবস্থায়। বালকটি স্কুল থেকে ফিরেছে।
সে দোকানের জানালার দিকে দেখাল। তার মাকে। সেখানে থরেথরে সাজানো আছে খেলনা। একটা ছোট ক্রিকেট সেট আছে সেখানে। একটা ব্যাট, প্যাড, উইকেট ও গ্লাভস। একটা ছোট্ট হেলমেট। একটি ক্যাম্প। যার মধ্যে লাল সুতো দিয়ে শচীন টেন্ডুলকারের মুখ ঝোলানো। এর সঙ্গে একটা বাদামি ক্লিপবোর্ড আছে। সঙ্গে ছোট্ট নোট প্যাড আর কলম। যেখানে স্কোর লেখা যায়। কাগজটিতে দাগ টানা।
সেখানে বোলারের ফিগার ওভার বাই ওভার, বল বাই বল লেখা যাবে। বাচ্চাটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। নারীটি শিশুটির মা। তাকে বেশ ক্লান্ত দেখায়। যদিও সে ছেলেটাকে দোকানে নিয়ে এসেছে। গ্লাসের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সে ভাবছিল, কোনটা সে কিনতে চায়। এ সময় সে কণ্ঠস্বর শুনে পেছন দিকে তাকায়।
আপনি কি ভয় পেয়েছেন?
আমি তা মনে করি না। আমি কিছুই লুকাইনি। আমি জানি আপনাদের কেউ কেউ নার্ভাস। তবে বেশিক্ষণ আপনাদের ধরে রাখব না। আমার বাস আসা পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। তার পর চলে যাব। কিন্তু আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই এতে। বলুন, এতে কী ক্ষতি হবে? পাখিটা রেগে যাবে। সে হয়তো এক মিনিটের জন্য উড়বে অথবা অমন কিছু করবে। অথবা কোনো একটা ছাদে গিয়ে বিশ্রাম নেবে।
হ্যাঁ, এ রকম যে হবেই, তা আমি বলছি না। আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি ও রকম কোনো ঘটনা ঘটেও, পাখিটা কারো ছাদে এক সেকেন্ডের জন্য অপেক্ষা করবে। দেখবে কেউ দেখছে কি না। কারণ, আমরা কোনো ঝামেলা চাই না। কেউ আপনাদের দিকে চোর চোর বলে দৌড়াবে না। এবং পরিষ্কার হয়েই গেল সবকিছু ঠিকঠাক। যদি মনে হয়, কেউ দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে এবং যদি তারা জিজ্ঞেস করে আপনারা কোথা থেকে এসেছেন, কে আপনি। তাদের বলবেন। কেন আপনি সত্য গোপন করবেন। আপনি তো কোনো কিছু চুরি করছেন না। তাদের বলবেন, আপনি পাখির ডানায় ভর করে আকাশ থেকে নেমে এসেছেন।
এ কথা শুনে জনতা হাসে। কেউ হাততালি দিয়ে তাদের সম্মতি জ্ঞাপন করে। কেউ একজন আট আনা ছুড়ে দেয়। এই শব্দটা পাখিটাকে বিরক্ত করে। সে খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটাতে থাকে। খাঁচার শিকের ভেতর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে।
রাস্তা পার হয়েই তারা সিনেমা হল লবির ফ্লোরে দাঁড়ায়। দুটো বালক, দুজনের বয়সই ১৩-এর বেশি হবে না। তাদের কাছে মেঝে মোছার যে মব, তা পুরোনো হয়ে গেছে। একটা ছেঁড়া টাওয়েল লাঠির আগায় বাঁধা।
নারীটি তাদের তাকিয়ে দেখতে থাকে। তাদের বালতির জল ক্রমে কালো হয়ে উঠছে। তাদের উচিত জলটা ফেলে দেওয়া। সে ভাবে, নতুন জল দিয়ে বালতিটা ভর্তি করে ফ্লোরের ময়লা মোছা উচিত। কিন্তু এখানে তা সম্ভব নয়। কেননা, তাদের দেখার কেউ নেই। এবং তাদের এটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। মধ্যাহ্ন শোতে বেশিরভাগই ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ছেলেরা বেশি থাকে। বিশেষ করে স্কটিশ চার্চের ছেলেরা বেশি। একটু দূরের সেন্ট পলের ছেলেরাও আছে। এই শোতে সাধারণ ইংরেজি সিনেমা দেখানো হয়। এমন একটা নাম থাকে, যা যৌনতাকেই প্রাধান্য দেয়। সেই সঙ্গে থাকে একটা সাদা চামড়ার নারীর পোস্টার।
আজকের শোয়ের নাম ছিল ‘ইনডিসেন্ট প্রপোজাল’। দর্শকরা ডেমি মুরের গ্রীবার অংশ কেটে নিয়েছে, কেউ রেডফোর্ডের গালের অংশ ছিঁড়ে নিয়েছে।
আমি দুঃখিত বন্ধুরা, কোনো ভারি নারী-পুরুষ এর ওপর ওঠার নিয়ম নেই। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমার পাখি অনেক স্ট্রং। তাকে আমি অনেক খাবার দিই। দিনের মধ্যে পাঁচবার তাকে খেতে দেওয়া হয়। বিশেষ করে ক্রিম বিস্কুট, মাঝেমধ্যে মুরগি ও ভাত। তারপরই সে একটা পাখি। কতটুকুই বা ওজন সে নিতে পারে!
আরেক দফা ক্ষমা প্রার্থনায় জনতা খুবই আনন্দ পায়। এর মধ্যে একটি বাস থামে। যাত্রীদের কেউ কেউ মাথা বের করে দেখার চেষ্টা করে, ওখানে কী হচ্ছে? এখানে ভিড়টা কিসের? কিছু লোক ভিড় থেকে বেরিয়ে বাসে উঠল। এবং নতুন করে ভিড় জমে উঠল।
তার ছেলেটি এখনো ক্রিকেট সেটটির দিকেই মুগ্ধ হয়ে আছে, তাই সে কয়েক কদম এগিয়ে ভিড়টার দিকে যায়। সে খুবই মজা পায়। সে বুঝতে চায় লোকটি আসলে কী করতে চায়? লোকটি পাখিটাকে দিয়ে কী করাবে? সে আসলে কী পেতে চায়?
আপনাদের মধ্যে একজন সিদ্ধান্ত নেন, আমাকে জানান, আমি প্রস্তুত। আমার পাখিও প্রস্তুত। আমরা খুব সুন্দর সময় বেছে নিয়েছি। সবচেয়ে ভালো সময় হলো বিকেল ৩টা/৪টা। কারণ, সূর্য ঢলে যেতে থাকলে আপনার বা পাখির গগলস লাগবে না। আপনারা ইচ্ছা করলে গগলস পরতে পারেন। কিন্তু আমার পাখির লাগবে না।
আরেক দফা হাসির রোল পড়ে যায়।
শিশুটি এবার নিজে নিজেই দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। আর তার মা জনতার কাছাকাছি এবং লোকটি কী বলছে, তা শুনতে পাচ্ছে।
আমার পাখির গগলস দরকার নেই। সে খুবই হ্যান্ডসাম। সে আমার ব্ল্যাক ডায়মন্ড। এখন সে ওড়ার জন্য প্রস্তুত। আশা নিয়ে এর পিঠে উঠুন। মাথা পেছনে হেলিয়ে দেন। এবং বাতাসকে আপনার চুল ছুঁতে দেন। এবং তাকে উঠতে দেন।
চল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে—ম্যাক্সিমাম এক ঘণ্টার মধ্যে। যদি বাতাস ঠিকমতো বয়, তবে আপনারা চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে পৌঁছে যাবেন। বউবাজারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখবেন ফার্নিচারের দোকান। আপনি এত উপরে থাকবেন যে, আপনাদের নাকে তারপিন এবং বার্নিশের গন্ধ লাগবে না। এবং যখন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস বিল্ডিংয়ের ডান পাশে থাকবেন, পাখিটা একটু বিশ্রাম নেবে। ছাদের ওপর তখন কেউ থাকবে না। সবাই নিচতলায় কাজ করছে। সেখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না। পাখিটার আবদার রাখবেন না। আপনারা ভালো টাকা দিয়েছেন। সে যদি করুণ দৃষ্টিতে আপনাদের দিকে তাকায়, তবু তাকে পাত্তা দেবেন না। তাকে আবার উড়তে বলবেন।
পরের আধঘণ্টায় আপনারা পার্কস্ট্রিটে এবং চৌরঙ্গির পাঁচতারকা হোটেল অতিক্রম করবেন। আপনারা যদি ভাগ্যবান হন, সে আপনাদের গ্র্যান্ড হোটেলের ওপর দিয়ে নিয়ে যাবে। এবং আপনারা দেখতে পাবেন সেখানে ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা থেকে লোকজন এসেছে।
মা এবার শিশুটির দিকে ফেরে। তখন সে দোকানিকে কী যেন জিজ্ঞেস করছে। দোকনদার মধ্যবয়সী। শিশুটির একের পর এক কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। যার দাম কখনো তার পিতা-মাতা দিতে পারবে না। তাই সে পত্রিকা পড়তে থাকে।
পত্রিকা থেকে মাথা উঠিয়ে দুবার মাথা নাড়িয়ে সে শিশুটিকে চলে যেতে বলে।
যখন আপনারা পার্ক স্ট্রিট পার হবেন, পাঁচ মিনিটে অথবা তার মাথায়ই নিচের দৃশ্যগুলো পরিবর্তিত হতে থাকবে। ঘরবাড়ি চলতে থাকবে, তাদের ছাদগুলো হাওয়া হয়ে যাবে। যেসব শিশু সেখানে খেলছিল, তারাও হাওয়া হয়ে যাবে। শুধু সবুজ ময়দানের মধ্য দিয়ে প্রবহমান কালো পিচের রাস্তার মধ্যে সাদা গাড়ি এবং হলুদ ট্যাক্সি ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
কিন্তু খুব সাবধান, যখন শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানের পাশ দিয়ে যাবেন, যার সম্পর্কে পেপারে পড়েছেন, রেডিওতে শুনেছেন এমনকি টিভিতে দেখেছেন—সবাই, সবাই এর কথা জানেন। এটা এত উঁচু যে আমার পাখিটা অত উঁচুতে উড়তে পারবে না। সুতরাং খুব সাবধান । ওই উঁচু বিল্ডিংয়ের মাঝবরাবর কেবল পাখিটা উড়তে পারবে।
লোকটি তার হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসে মাথা নুইয়ে খাঁচার সামনে পাখিটির চোখে চোখ রাখে। সে তার গলার স্বর নিচু করে। পাখিটি ঘাড় বাঁকিয়ে তার কথা শোনার জন্য সজাগ হয়।
ওহ আমার সোনা পাখি মনে রেখ তুমি শুধু সোজা উড়বে, ডানে বাঁয়ে কোথাও তাকাবে না, কেবল একটু ধীরে চলবে যেন তারা বিল্ডিংয়ের ভেতর কী হচ্ছে তা যেন দেখতে পায়। তুমি কি প্রস্তুত?
শুনতে পাচ্ছ আমায়?
চুপ। সবাই চুপ, পাখিটি এখন কথা বলে উঠবে।
ভিড়ের মধ্যে কোনো মানুষ একচুল নড়ে না। সমস্ত চোখ খাঁচার দিকে। শিশুটিও তার মায়ের কাছে এসে দাঁড়ায় কারণ এখানে অনেক ভিড়। সে তাকে উঁচু করে ধরে—কী হচ্ছে তা দেখার জন্য। এদিকে সিনেমা হলের কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন হয়ে গেছে।
পাখিটি ডেকে ওঠে—একবার, দুইবার।
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার ভাইবোনেরা, সে বলেছে, হ্যাঁ হ্যাঁ সে তৈরি। সে আপনাদের ওই উঁচু বিল্ডিংটায় নিয়ে যেতে রাজি।
আমার পাখির ওপর সওয়ারি হন। যান এবং দেখুন। একে মাটি থেকে নয়। এখান থেকে কিছুই দেখতে পাবেন না। ওখান থেকে দেখুন কী লম্বা বিল্ডিং। এত উঁচু দালান দেখে আপনাদের চোয়াল শক্ত হয়ে যাবে। বিল্ডিংয়ের চারপাশে শক্ত দেয়াল তার ওপর গ্লাস বসানো আছে। আপনি রাতে ইচ্ছে করলেই ওখানে যেতে পারবেন না। যদি আপনারা পাখিটার ওপর থাকেন, তাহলে আর ভাবনার কিছু নেই। সে আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে। এবং আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে তারা বাস করেন।
এ সময় আরেক দফা রদবদল হয়। জনতা এর মধ্যে অর্ধেক হয়ে যায়। বাস আসে, তারা চলে যায়।
নারীটি তার ঘরে আসে। শিশুটি কাপড় পাল্টায়, দুপুরের খাবার খায়। সে বলে তার ঘুমানো দরকার। কারণ বাইরে অনেক রোদ। ঘুম থেকে উঠে সে বাইরে খেলতে যেতে পারবে। তার পর ফিরে এসে পড়তে বসবে। সে হারিকেনের চিমনি পরিষ্কার করতে করতে বলে যদি পরীক্ষায় ভালো করে, তবে তাকে ওই সেটটি কিনে দেবে। সে একবারে ওই সেটটি কিনতে পারবে না। তাকে একটা একটা করে কিনে সেট বানাতে হবে।
এ কথায় সন্তুষ্ট হয়ে শিশুটি বিছানায় যায়। নারীটি রাস্তার পাশের পাইপে হাত মুখ ধোয়।
দশ মিনিট পর সে তার কাজ শুরু করে। বিকেলের কাজ দাশগুপ্তাদের। হালকা পাতলা কাজ। কেবল মেঝে পরিষ্কার করা, দুধ আনা আর চা বানানো। এবং যখন সে ময়লা পানি ফেলে নতুন করে পানি ভরে মেঝে পরিষ্কার করতে যাচ্ছে, তখন পাখিটাকে জানালায় বিশ্রাম করতে দেখে।
সে ওটির দিকে তাকায়। কল্পনা করে নিজেকে ওর পিঠের ওপর। এটা যে অবিশ্বাস্য তা ভেবেই তার হাসি পায়। সে একজন ৩৭ বছরের নারী। তার নিজেকে পালতে হয়, শিশুকেও। একলা এই শহরে। এরই মধ্যে সে ওই লোকটির আজগুবি কথা শুনে সময় নষ্ট করে ফেলেছে। তবু, ওই পাখি আর ওই উঁচু বিল্ডিংয়ের গল্প শুনে তার ভেতরে ভেতরে খারাপ লাগতে থাকে...।