প্রকাশকের কথা
বই প্রকাশ আমার পেশাও না, ব্যবসাও না : শেখ রফিক

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতিবছরই প্রকাশনীগুলো নতুন নতুন বই নিয়ে উপস্থিত হয় পাঠকের সামনে। প্রকাশনী, বই-ভাবনা আর এবারের বইমেলা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘বিপ্লবীদের কথা’ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শেখ রফিক।
প্রশ্ন : প্রকাশক হিসেবে এবার আপনার কততম বইমেলা এবং তা কেমন দেখছেন?
শেখ রফিক : প্রকাশক হিসেবে এটা আমার তৃতীয়তম বইমেলা। আমার দেখা তিনটা বইমেলার কোনো মেলাতেই পাঠক, দর্শক, প্রকাশক তাঁদের যে একটা পরিবেশবান্ধব, সুন্দর মনোরম যে বইমেলা, সেটা দেখিনি। যেখানে পাঠকের স্টল খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না, ধুলাবালির সম্মুখীন হবেন না, তাঁদের টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা থাকবে, এখানে সেটার কোনোটি নেই। এখানে পাঁচ ঘণ্টা সময় যে সবাই সুন্দরভাবে কাটাবে, সে পরিবেশ এখনো হয়নি।
প্রশ্ন : আপনার ‘বিপ্লবীদের কথা’ প্রকাশনী সম্পর্কে এবং কী ধরনের বই প্রকাশ করেন, তা জানতে চাই?
শেখ রফিক : কলেজজীবনে বাম ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। তখন চিন্তার মধ্যে বিপ্লবী রোমান্টিসিজম কাজ করত। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতাম, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতাম। তখন থেকে নানা রকমের বইপত্র পড়তাম। একপর্যায়ে পৃথিবীতে কারা কোন দেশে সমাজতন্ত্রের জন্য কাজ করেছে, কারা নেতৃত্ব দিয়েছে, আমাদের উপমহাদেশে কারা সমাজতন্ত্রের জন্য কাজ করেছে—এসব বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি। যত পড়াশোনা করতে থাকি, আমার চোখের সামনে আরো বেশি অন্ধকার ঘনীভূত হতে থাকে। মনে হতে থাকল, আমি এখনো কিছুই জানি না। কত মানুষের কত ত্যাগ, কত প্রাণ ফাঁসির মঞ্চে হাসিমুখে জীবন দিল, কত প্রাণ নিজেই আত্মাহুতি নিল, কতজন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে মারা গেল—এ সবকিছুর মূলেই মানুষের স্বাধীনতা অর্জন, অর্থনৈতিক মুক্তি, একটু মানবিক জীবনযাপনের জন্য তাঁরা জীবন দিলেন। অথচ আমরা প্রায় সবাই কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে গেলেও তাঁদের ইতিহাস জানি না। যেটা আমি এই ছাত্ররাজনীতির সংস্পর্শে এসে আমার এই অজ্ঞতা আবিষ্কার করতে থাকলাম। নিজের অজ্ঞতা আর যাঁরা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন, সেসব সহযোদ্ধার সেই ইতিহাস জানানোর তাগিদ থেকেই আমার এ উদ্যোগ। তবে শুরুটা ছিল ‘বিপ্লবীদের কথা’ নামে একটা বুলেটিনের মধ্য দিয়ে।
প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত কতজন বিপ্লবীর জীবনী প্রকাশ করেছেন?
শেখ রফিক : এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ বিপ্লবীর জীবনী নিয়ে বই প্রকাশ করেছি। কিন্তু এ রকমভাবে যেমন শত বিপ্লবীর কথা, যেখানে একশজন বিপ্লবী ও ত্যাগী মানুষের জীবনী ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকার আছে। এ ছাড়া শত নারী বিপ্লবী নিয়েও বই আছে।
প্রশ্ন : এবার বইমেলায় নতুন কয়টা বই প্রকাশ করেছেন?
শেখ রফিক : ২০১৫ সালে আমরা ২১টি বই করেছি, কিন্তু এই বইমেলায় ১৫টি নতুন বই নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : এবার প্রকাশিত নতুন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম জানতে চাই?
শেখ রফিক : নতুন বইগুলোর মধ্যে আছে—একাত্তর প্রথম খণ্ড, টঙ্ক আন্দোলন, বিপ্লবী কমরেড জসিমউদ্দিন মণ্ডল, ইলা মিত্রের জবানবন্দি, সাম্য স্বাধীনতা ও বিপ্লবের কবিতা, ভাষাসংগ্রামী আহম্মদ রফিকের সাক্ষাৎকার, বিপ্লবী নলিনী দাস স্মৃতিকথাসহ আরো বেশ কিছু বই আছে।
প্রশ্ন : এবার বইমেলায় পাঠক-দর্শকের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
শেখ রফিক : আসলে সাড়া পাওয়া না-পাওয়ার জায়গা থেকে তো আর এটা করা হয়নি। বই প্রকাশ আমার পেশাও না, ব্যবসাও না। সমাজ পরিবর্তনের জন্য আমার যেটুকু চেষ্টা, তা বই আকারে সবার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি—এটাই আমার লক্ষ্য। যাঁরা সমাজের পরিবর্তন চান, যাঁরা ইতিহাস জানতে চান তাঁরা আসবেনই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, তরুণদের লক্ষ করে বইগুলো ছাপানো, তারাই এ বইগুলো পড়ে না।
প্রশ্ন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শেখ রফিক : আপনাকেও ধন্যবাদ।