রবীন্দ্রনাথের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী আজ, কুঠিবাড়িতে সাজ সাজ রব
‘আজ হতে শতবর্ষ পরে। কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি, কৌতূহলভরে....। আজ হতে শতবর্ষ পরে...।’ বাংলা চৌদ্দশ’ সনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো ভেবেছিলেন নশ্বর এ বিশ্বের মানুষ তাকে ভুলে যাবে। তাই লিখেছিলেন এই কবিতা। তবে না! বিশ্বকবিকে ভুলে যায়নি বিশ্ববাসী। কবি তাঁর সৃষ্টি সাহিত্যকর্ম দ্বারা আজও রয়েছেন মনের মণিকোঠায়।
২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষ্যে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে জাতীয়ভাবে তিনদিনব্যাপী বার্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
এ সব তথ্য নিশ্চিত করে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মো. আল আমিন বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনদিনব্যাপী রবীন্দ্র সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা সভা, মঞ্চ নাটক ও গ্রামীণ মেলার চলবে আগামী শনিবার (১০ মে) মধ্যরাত পর্যন্ত।
বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এই অঞ্চলে জমিদারি পান। ১৮৯১ সালে পিতার আদেশে জমিদারি দেখাশোনার কাজে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহে আসেন। কবিগুরু ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহে জমিদারি পরিচালনা করেন। পদ্মা পাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি একে একে রচনা করেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালীসহ বিখ্যাত সব কাব্য গ্রন্থ।
নিভৃত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শিলাইদহে কবির জীবনের বেশ কিছু মূল্যবান সময় কেটেছে। এখানে বসে রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থই রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছে নোবেল পুরস্কার আর বিশ্বকবির মর্যাদা। এ ছাড়াও তিনি এখানে বসেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতসহ অসংখ্য কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে সেসব দিনের নানা স্মৃতি। অসংখ্য গান, কবিতা, চিঠি, চিত্রকর্ম ও সাহিত্য শিলাইদহকে করেছে রবীন্দ্রসাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য।
বুধবার (৭ মে) বিকেলে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুঠিবাড়ির সম্মুখে ফাঁকা মাঠে প্রস্তুত মঞ্চ। দেওয়াল ও গাছের গোড়াতে সাদা রং লাগানো হয়েছে। কুঠিবাড়ির সামনের সড়কে চলছে আলপনা আঁকার কাজ। কুঠিবাড়ির ভিতরে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসেছেন রবীন্দ্র ভক্তরা।
এ দিন চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবার কুঠিবাড়িতে এসেছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র জয় দাস। তিনি বলেন, ‘চাচা, ভাই-বোনদের নিয়ে প্রথমবারের মত এখানে এসেছি। আগে শুধু পাঠ্যবইয়ে পড়েছি। আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে বাস্তবে কবি গুরুর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি।’ তাঁর ভাষ্য, ছোট বেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কর্মের ভক্ত তিনি।
২৫ বৈশাখ উপলক্ষ্যে ঢাকা থেকে শিলাইদহ এলাকায় স্বজনদের বাড়িতে এসেছেন বেসরকারি চাকুরিজীবী শাকিল হোসেন। তিনি বলেন, কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র সাহিত্য কর্মের ওপর থিয়েটার, ডিসপ্লে প্রদর্শনীসহ আরও কিছু সংযোজন করা হলে দর্শনার্থীরা আরও বেশি সময় ধরে বিনোদন করতে পারবে।
কুঠিবাড়ির প্রধান ফটকের বাইরের আমবাগানে বসেছে গ্রামীণ মেলা। সেখানে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। এ সময় রাজবাড়ী থেকে আগত ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অন্তত ২০ বছর ধরে মেলায় ব্যবসা করি। চার দিন থেকে চলে যাব। তার ভাষ্য, মেলায় আগের মত দর্শনার্থীরা আসেন না।
কালবৈশাখি ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার চিন্তা মাথায় রেখেও প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জন্মজয়ন্তী উদযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।