ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর বাস্তবে দেখতে কেমন?

মাইন নদীর তীরে অবস্থিত ফ্রাঙ্কফুর্টের দারুণ সব ছবি ইনস্টাগ্রামে দেখা যায়। কিন্তু শহরটি বাস্তবে দেখতে কেমন? সেটি জানতে ডয়চে ভেলে তিনটি হটস্পট ঘুরে দেখেছে। মাইন নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এবং উঁচু ভবন ও দারুণ স্কাইলাইনের জন্য জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টকে অনেকে ‘মাইন-হাটান’ বলে থাকেন। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের সঙ্গে মিলিয়ে এই নামকরণ করা হয়েছে।
ফ্রাঙ্কফুর্টে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় আছে। আছে জার্মানির সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরও। তবুও শহরে মনোরম পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যায়।
ফ্রাঙ্কফুর্টে গেলে সেন্ট বার্থলেমিউ গথিক ক্যাথেড্রাল দেখতেই হবে। এটি পুরাতন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। সেখানে অনেক সরু গলি আর আংশিক কাঠ দিয়ে তৈরি বাড়ি আছে।
প্রথম হটস্পটটি ছিল টাউন হল, যাকে ‘র্যোমার’ বলা হয়। এটি জার্মানির প্রাচীনতম টাউন হলগুলোর একটি। কিন্তু ট্যুর গাইড ভেরেনা র্যোজে বলছেন, সেখানে সবকিছু যেমন মনে হয়, আসলে তেমন নয়।
ট্যুর গাইড ভেরেনা র্যোজে জানান, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রাঙ্কফুর্ট ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছিল। বাইরের সম্মুখভাগ, আমি বলব, ৭০ ভাগ রক্ষা পেয়েছিল। ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার মনে হবে আপনি ১৯৫০-এর দশকে আছেন।”
র্যোমার হলো একটি স্থাপত্য মিশ্রণ, যা মধ্যযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শহরের ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে। সেখানকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো ইম্পেরিয়াল হল, যেখানে রোমান সম্রাটদের ৫২টি প্রতিকৃতি রয়েছে। ফ্রাঙ্কফুর্টের ঐতিহাসিক কেন্দ্রের আরেকটি অংশ তথাকথিত ‘নিউ ওল্ড টাউন’।
র্যোজে বলেন, “নিউ ওল্ড টাউন শুনতে অদ্ভুত শোনালেও বিষয়টি তাই। এটি একটি অত্যন্ত সাহসী উদ্যোগ ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত নগর উন্নয়নের সফল প্রকল্প ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও এর সবকিছুই ছিল, এবং যুদ্ধের পর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আপনি এখন যে বাড়িগুলো দেখতে পাচ্ছেন, তা ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।”
আসল হোক বা না হোক, ফ্রাঙ্কফুর্টের ঐতিহাসিক শহরের কেন্দ্রে বর্তমান এবং অতীত খুব ভালোভাবে মিশে গেছে, যা দেখতেও খুব সুন্দর!
দ্বিতীয় হটস্পটটি ছিল লোহার ফুটওভারব্রিজ, যার নাম ‘আইজেনার শ্টেগ’। শহরের আইকনিক ভবনগুলোর সামনে ছবি তোলার জন্য এটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান। এই পথচারী সেতুটি ১৮৬৮ সালে নির্মিত হয়েছিল, যা ৫০০ টন রট আয়রন দিয়ে তৈরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে এটি ধ্বংস করা হয়েছিল। পরে নদী থেকে পৃথক হওয়া অংশগুলো উদ্ধার করে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
ভেরেনা র্যোজে জানান, “এটি শহরের সবচেয়ে রোমান্টিক জায়গাগুলোর একটি। প্রেমকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে আসেন। এখানে লাভলক, বা প্রেমের তালাও আছে। সম্প্রতি একজন সংখ্যাটি গুণেছেন। তার হিসেবে এখানে প্রায় ৫৪ হাজার লাভলক আছে।”
লাভলকের কারণে সেতুতে বাড়তি ওজন জমা হয়। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে লাভলকের ভারে ল্যাম্পপোস্ট এবং রেলিং ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্টে এটি কোনো সমস্যা নয়—লোহার ফুটব্রিজে লাভলক লাগানোর অনুমতি এখনও আছে!
ফ্রাঙ্কফুর্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবির মোটিফ কী? স্কাইলাইন! শহরের লোরব্যার্গ পাহাড় থেকে এর দুর্দান্ত দৃশ্য দেখা যায়, যা আমাদের তৃতীয় হটস্পট। মূল শহর থেকে গাড়িতে সেখানে যেতে ২০ মিনিট লাগে। কিন্তু সেখানে কি অবশ্যই যাওয়া উচিত?
অবশ্যই! কারণ, সেখান থেকে পুরো শহরের দারুণ দৃশ্য দেখা যায়। ফ্রাঙ্কফুর্টে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন না থাকলেও জার্মানির সবচেয়ে উঁচু ভবন আছে, যার নাম ‘কমার্সব্যাংক টাওয়ার’—উচ্চতা ২৫৯ মিটার।
তাহলে সিদ্ধান্ত কী? পুরাতন শহর, লোহার ফুটওভারব্রিজ এবং দারুণ স্কাইলাইন—ফ্রাঙ্কফুর্টে যাওয়ার অনেক কারণ আছে।