‘আগে ফাঁসি ঠেকা, তারপর গাড়ি চালাইস’

সকাল পৌনে ৯টা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পূর্ব দিকে ডেমরা রোডের কাজলা ব্রিজের ওপর একটি বাসকে ঘিরে রেখেছ শতাধিক শ্রমিক। শ্রমিকদের হাতে ছোট ছোট পাত্রে পোড়া মবিল। কারো কারো হাতে বাঁশের লাঠি।
পরিবহন ধর্মঘট সফল করতে সড়কে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকদের এক নেতা ‘সেন্টমার্টিন পরিবহনে’র এ যাত্রীবাহী বাসটির চালককে সামনে আর না গিয়ে বাসটি পেছনের দিকে নিয়ে যেতে বলছেন। চালক অনুনয় বিনয় করে বলছেন, ‘ভাই যাত্রীদের নিয়ে রাতে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে এসেছি। সায়েদাবাদ টার্মিনালে গিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে আর বাস নিয়ে নামব না। এখানে নামিয়ে দিলে এতগুলো লোক মালপত্র নিয়ে কীভাবে যাবে।’
চালকের কথা শেষ হতে না হতেই এ শ্রমিক নেতা চালকের গালে কয়েকটি থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আরে বেটা আগে ফাঁসি ঠেকা। তারপর গাড়ি চালাইস। জানস না, এই আইন রাইখা আমরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলে জেল, জরিমানা ও ফাঁসি অইব। এই আইন রাইখা আমরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামব না।’

নেতার এ জ্বালাময়ী বক্তব্যের পরই কয়েকজন শ্রমিক এসে বাসটির সামনের পুরো গ্লাসটিতে পোড়া মবিল লেপ্টে দিলেন। চালক আর ভেতর থেকে সামনের দিকে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।
সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা কোনো ধরনের যানবাহনই চলতে দেয়নি। রিকশার যাত্রীদের নামিয়ে রিকশাগুলো ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে শ্রমিকরা। যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় সব সময় শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও আজ একজন পুলিশও চোখে পড়েনি।
সরকারি কর্মচারীদের বহনকারী বাসগুলোও যাত্রাবাড়ীতে আটকে দিয়েছে শ্রমিকরা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে অভিভাবকদের।
কয়কজন অভিভাবক সকাল সাড়ে ৯টায় ডেমরা শামসুল হক খান স্কুলের একটি মাইক্রো বাসে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। শ্রমিকরা এ গাড়িটি আটকে কোমলমতি এ শিক্ষার্থীরা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। চালক ও অভিভাবকরা করজোড়ে অনুরোধ করেও রেহাই পায়নি। যাত্রাবাড়ীতে এ মাইক্রোবাসটি আটকে দেয় শ্রমিকরা।

একজন অভিভাবক বলেন, ‘ভাই। এখান থেকে স্কুলের দূরত্ব পাঁচ-ছয় কিলোমিটার। এতটা পথ হেঁটে গিয়ে এ বাচ্চাগুলো পরীক্ষা দিতে পারবে না। তা ছাড়া সময়ও পাবে না। এখন বাজে সাড়ে ৯টা। ১০টার মধ্যে এতটা পথ হেঁটে গিয়ে এদের নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না।’
অভিভাবকের এ কথার জবাবে একজন শ্রমিক বলেন, ‘আপনি তো এতক্ষণ অনেক কথাই বললেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেন। তিনিই সব সমাধান করে দিবেন। চিন্তা কইরেন না। আজ একটু হেঁটেই যান।’
যাত্রাবাড়ীতে এ ঘটনার ছবি তোলার পর কয়েকজন শ্রমিক দৌড়ে এসে এ প্রতিবেদকের মোবাইল কেড়ে নেন। পরে ছবিগুলো ডিলিট করে দেওয়ার শর্তে মোবাইল ফেরত দেন তারা।
গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আইনটি সম্পর্কে জনসচেতনা সৃষ্টির জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে সরকার গত ১৭ নভেম্বর আইনটির প্রয়োগ শুরু করে। সীমিত আকারে প্রয়োগ করা হলেও পরিবহন শ্রমিকরা আইনটি সংশোধনের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ।