কক্সবাজারে প্রতারিত হয়ে মন ভেঙে যায় তিন ছাত্রীর

কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমেছিল ঢাকার পল্লবী থেকে ‘নিখোঁজ’ তিন কলেজছাত্রী। ঠিক এমন সময়, তাদের কাছে থাকা কিছু টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে নেন হাফসা নামের এক নারীর সহযোগীরা। এতে মন ভেঙে যায় তিন বান্ধবীর। তারা ভাবতে শুরু করে, প্রতারণার শিকার হয়ে পথে পথে ঘুরছে।
এরপর তিন ছাত্রী তাদের ভুল বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারা আর কক্সবাজারে থাকবে না। ফিরবে পরিবারের কাছে। ফিরবে রাজধানী পল্লবীর বাসায়।
র্যাবের দাবি, গত মঙ্গলবার রাতে ওই তিন ছাত্রী প্রতারণার শিকার হয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার উদ্দেশে রওনা দেয়। বুধবার ভোর ৪টার দিকে তারা রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় এলে তাদের উদ্ধার করা হয়। সে সময় তাদের কাছে থাকা পাঁচ লাখ টাকা ও কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে র্যাব-৪-এর একটি দল, যে দলটি কক্সবাজার থেকে ওই শিক্ষার্থীদের অনুসরণ করতে করতে পিছু নিয়েছিল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক উদ্ধার হওয়া ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনের কাছে এ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘তবে এ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অনেক আধুনিক সভ্যতার ভাবে। পরিবারের দেওয়া বিধিনিষেধ তারা মানতে চায় না। ফলে পরিবারের সঙ্গেও কিন্তু তাদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘এক সময় তাদের মনে হয়েছে, তারা মুক্ত জীবন পছন্দ করে। এমন সময় কথিত হাফসা নামের এক নারী তাদের জাপানে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। সেই প্রলোভনে পড়ে তারা পরিবার থেকে পালিয়ে যায়। তারা ভেবেছিল, জাপানের উন্মুক্ত জীবনযাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলবে। তারপরও তো প্রতারণার শিকার হলো।’
‘ঢাকা থেকে পালিয়ে কক্সবাজার গিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন সমুদ্রে নামছিল, তখন হাফসার সহযোগীরা তাদের কাছে থাকা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে নেয়। এ ছাড়া তারা সি শাইন নামে যে হোটেলে উঠেছিল, সেখানকার টাকাও তাদের দিতে হয়। কথা ছিল, সব হাফসা দিবেন। এরপর মূলত তারা বুঝতে পারে, প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা। তখন তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ঢাকায় পরিবারের কাছে ফেরার। কিন্তু, তার আগে থেকে তাদের পেছনে আঁড়ি পেতে থাকা আমাদের একটি টিম ওই হোটেলে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেন। সেখানে পৌঁছান। আমাদের গতিবিধি শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারে। এবং তারা যখন কক্সবাজার থেকে রওনা দেয়, তখন পেছনে পেছনে আমাদের টিম এসেছিল’, যোগ করেন র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
তবে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ওই হোটেলের সিসি ক্যামেরাতে আমরা হাফসার অস্তিত্ব পাইনি। এমনকি, শিক্ষার্থীরা হাফসার কথা বললেও তার কোনো ঠিকানা, মুঠোফোন নম্বর কিংবা ফেসবুক আইডি দিতে পারেনি। শুধু নাম শুনেছি, বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব এখনও আমরা পাইনি। এ ছাড়া হাফসার পরিচিত যাদের কথা শুনছি, তাদেরও শনাক্ত করা যায়নি। এখন ওই তিন শিক্ষার্থী বাঁচার জন্য হাফসা নামের মানুষকে সৃষ্টি করেছে নাকি সত্য, তা আমরা তদন্ত করছি।’
হাফসার সঙ্গে পরিচয় কীভাবে ওই তিন শিক্ষার্থীর, এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে যে চারজনকে তাদের মধ্যে একজন তরিকুল। ওই তরিকুলের মাধ্যমে পরিচয় বলে আমরা জেনেছি। তবে তরিকুলের বয়স তো এখনও ১৮ পূর্ণ হয়নি। ফলে তাকে রিমান্ডে নিতে পারবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে করে হাফসাকে খুঁজে বের করা মুশকিল হবে। ওই নারীর সঙ্গে তরিকুলের কোনো যোগসাজস রয়েছে কিনা তাও জানা মুশকিল। জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে কী আর এসব হয়?’
গতকাল মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্লবী থেকে বের হয়ে তিন ছাত্রী কুমিল্লা হয়ে কক্সবাজার যায়। কুমিল্লায় পৌঁছে নিজেদের লুকানোর জন্য তারা পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশ-ভুষা ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস, পোশাক এবং একটি মোবাইল ক্রয় করে। নিজের কাছে থাকা সব সিম ভেঙে ফেলে।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে পল্লবী থেকে তিন কলেজছাত্রী নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার নিখোঁজ এক ভুক্তভোগীর বোন কাজী রওশন দিল আফরোজ নামের এক আইনজীবী তিন পরিবারের হয়ে একটি মামলা করেন। শনিবার এ ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে মামলার এজাহারে থাকা চারজনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। ওই চারজনই তিন শিক্ষার্থীর বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিক। তারা চারজন এখন কারাগারে রয়েছে। এদিকে উদ্ধার হওয়া তিন ছাত্রী রয়েছে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে একই সময়ে তাঁর বোনসহ তিনজন নিখোঁজ হয়। তাঁর বোন বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মুঠোফোন নিয়ে গেছে। আরেকজন আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার এবং অপরজন ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সজিব খান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘র্যাব উদ্ধার করার পর গতকাল বুধবার পল্লবী থানা পুলিশের কাছে তিন শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করে। তখন পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আজ তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার ২২ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। তারপর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’