পল্লবী থেকে ‘নিখোঁজ’ তিন ছাত্রী কক্সবাজারে ঘুরছিল!

রাজধানীর পল্লবী থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। তাদের দাবি, তিন ছাত্রী কক্সবাজার থেকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় এলে আজ বুধবার ভোর ৪টার দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
আজ বুধবার বিকেল র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক উদ্ধার হওয়া ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেছেন, ‘নিখোঁজ ওই তিন শিক্ষার্থী পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে গাবতলী যায়। সেখান থেকে সাভারে গিয়ে একটি নোয়া গাড়িতে চড়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলে ট্রেন মিস করে।’
‘ওই তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাফসা নামের এক নারীর কথা আমরা তাদের কাছ থেকে শুনেছি। তারপর কমলাপুর থেকে ওই শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাসে চড়ে হাফসা কুমিল্লাতে যান। সেখানে গিয়ে তিন শিক্ষার্থী তাদের কাছে থাকা সব সিম কার্ড ভেঙে ফেলেন। একটি মুঠোফোনও ক্রয় করেন। এরপর সেখান থেকে তারা কক্সবাজারে যায়। কক্সবাজারে গিয়ে সি শাইন নামের একটি হোটেলে ওঠে।’
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের যে হোটেলে ওই শিক্ষার্থীরা ওঠে, আমরা সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছি। তবে, ওই ফুটেজে তাদের তিনজনের বাইরে কারো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে ওই নারী নাকি তাদের জাপান নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। এখন ওই হাফসা নামের নারী কাল্পনিক নাকি সত্য, তা আমরা যাচাই করার চেষ্টা করছি।’
শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে র্যাবের অধিনায়ক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন সমুদ্রে নামে তখন হাফসা নামের ওই নারীর লোকজন শিক্ষার্থীদের কাছে থাকা কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা নিয়ে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই হোটেলের একটি ভাড়া কক্ষের টাকাও তারা নিজেরা মিটিয়েছিল।’
প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম, তারা কক্সবাজার গেছে। এ তথ্য জানার পর আমাদের একটি টিম কক্সবাজারে যাই। তারপর থেকে আমাদের টিম তাদের দিকে নজর রাখে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা একটি বাস আব্দুল্লাহপুর পৌঁছালে বেড়িবাধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এখন আমরা তাদের পল্লবী থানায় হস্তান্তর করব।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে পল্লবী থেকে তিন কলেজছাত্রী নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার নিখোঁজ এক ভুক্তভোগীর বোন কাজী রওশন দিল আফরোজ নামের এক আইনজীবী তিন পরিবারের হয়ে একটি মামলা করেন। শনিবার এ ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে মামলার এজাহারে থাকা চারজনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
গত রোববার এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সজিব খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীকে এখনও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তবে গ্রেপ্তারকৃতরা নিখোঁজ কিশোরীদের খুব কাছের বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিক। গ্রেপ্তারকৃত ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর একই বয়সী নিখোঁজ কিশোরীর প্রেমিক। এ ছাড়া নিখোঁজ আরেক কিশোরীর প্রেমিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিখোঁজদের এক বান্ধবী ও বন্ধুকে।’
আজ বুধবার সজিব খান বলেন, ‘আমি এখন র্যাবে আছি। আমাদের কাছে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
কাজী রওশন দিল আফরোজ গত শুক্রবার পল্লবী থানায় করা মামলার অভিযোগে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে একই সময়ে তাঁর বোনসহ তিনজন নিখোঁজ হয়। তাঁর বোন বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মুঠোফোন নিয়ে গেছে। আরেকজন আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার এবং অপরজন ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
মামলার বাদী কাজী রওশন দিল আফরোজের কাছে জানতে চাওয়া হয় ঘটনাটি কখন ঘটে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে। আমার বোন সাধারণত এত সকালে ঘুম থেকে ওঠে না। কিন্তু, সেদিন উঠেছিল। এবং আমাদের বাসার নিচে সেদিন সকাল থেকে কয়েক জন নারীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। আমার ধারণা, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা বড় কোনো গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িত, যারা আমার বোনসহ তার দুই বান্ধবীকে প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করেছে।’
কাজী রওশন দিল আফরোজ আরও বলেন, ‘আমার বোনের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া একটি ছেলে প্রায়ই দেখা করত। তাদের যে বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেও আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসত। ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া বান্ধবী এবং আমার বোনের বন্ধু নিখোঁজ ছিল। তারপর তাদের পাওয়া গেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলেছি, ওদেরকে বুঝিয়েছি। কিন্তু, ওরা এত স্মার্টলি মিথ্যা কথা বলতে পারে, আমি বোধ হয় এমন ছেলে-মেয়ে কখনও দেখিনি। এবং ওরা এত বেশি চালাক যে, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাদের মুঠোফোন ও কম্পিউটারে কোনো তথ্য পায়নি। সব ডিলিট করে ফেলেছে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা বলছে, তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। অথচ, তারা সব জানে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হ্যাকার। আইডি হ্যাক করে টাকাও আয় করে সে।’