করোনায় মৃত্যুর গুজব, ফেসবুকে বিভিন্ন অভিযোগ সেবিকার

দেশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ৪৭৫ চিকিৎসক ও ৩২৫ জন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া আক্রান্তদের ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বিভিন্ন গুজবও। এরই মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সিনিয়র সেবিকা ও নার্সিং সুপারভাইজার শিলা রানী দাস করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে ফেসবুকে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এ ছাড়া এক সেবিকা অন্য রোগে অসুস্থ থাকার পরও তিনি করোনায় আক্রান্ত বলে গুজব ছড়ানো হয়। প্রশাসন থেকে লকডাউন করা হয় তাঁর বাসাও।
এর মধ্যে খুমেকে নমুনা পরীক্ষার পর গত মঙ্গলবার হাসপাতালের সেবিকা শিলা রানী দাসের করোনা ধরা পড়ে। তিনি গত ৪ এপ্রিল থেকে খুলনা করোনা হাসপাতালে (ডায়াবেটিক হাসপাতাল) কর্মরত ছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার পর ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয় তাঁকে।

কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার শিলা রানী দাসের মৃত্যুর খবর ফেসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। এরপর অনেকেই শোকবার্তা জানান। পরে মধ্যরাতে কয়েকজন সাংবাদিক জানান, তথ্যটি ভুল।
পরে গতকাল ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে শিলা রানী দাস সামনে নিয়ে আসেন কয়েকটি অভিযোগ। ফেসবুকে শিলা রানী লিখেন, ‘আমি শিলা রানী দাস, নার্সিং সুপারভাইজার পদে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি। আমি স্বাধীনতা নার্স পরিষদের খুলনার বিভাগীয় প্রেসিডেন্ট। গত ০৪.০৪.২০২০ থেকে করোনা হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলাম। গত ২৮.০৪.২০২০ এ আমার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
এখন আমি করোনা হাসপাতালে ভর্তি আছি।
আমার জন্য সকলে একটু আশীর্বাদ করবেন, আমি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আপনাদের সবার মাঝে ফিরে আসতে পারি।
তবে খুব কষ্ট লাগছে আমাদের এলাকার কমিশনারসহ কিছু লোকের কর্মকাণ্ড শুনে। আমি যখন করোনা হাসপাতালে ভর্তি হই, তখন তারা আমার বাসার কাজের লোকের বাসা লকডাউন করছে, ঠিক আছে!
কিন্তু আমি একজন নিরামিষভোজী, আমার বাড়ির মানুষজন বলেছে আমার খাবারের ব্যবস্থা করতে, আমি নিজেও বলেছি.. কিন্তু তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছে!
আমার সমাজের কাছে প্রশ্ন, আমি রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি, এখানে আমার অপরাধটা কোথায়? আমি কি কোনো অপরাধী যে আমাকে খাবারটা পর্যন্ত দেওয়া যাবে না! আমি কি না খেয়ে মারা যাবো? এ কেমন বিচার?
কারা এদেরকে এলাকার মানুষের দেখাশোনার ভার দিয়েছে?’

এ বিষয়ে শিলা রানী দাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে আমার বাড়ি বা আমার গৃহকর্মীর বাড়ি লকডাউন করা হয়নি। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের তিনজন ঘনিষ্ঠ লোক এই লকডাউন করেছে। ওয়াহিদ ও তৌফিক নামের দুজন কাউন্সিলরের নাম ভাঙিয়ে তারা বাসায় খাবার দিতে দিচ্ছে না। বাসায় আমার মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে না খেয়ে আছে।’
বিষয়টি অস্বীকার করে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি বলেন, ‘আমি ওই নার্সের মেয়েকে গতকাল সান্ত্বনা দিয়ে এসেছি, খাবারের জন্য আমার কাছে কেউ ফোন করেনি।’ কাজের লোকের বাসা লকডাউন করলে পুলিশ প্রশাসন করেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবীর বলেন, ‘ওই নার্সের পরিবারকে হয়রানির বিষয়টি আমি জানতাম না।’ এ ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
অন্যদিকে, খুমেক হাসপাতালের এক সেবিকা গলব্লাডার অপারেশনের পর রূপসা উপজেলার বাগমারায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর মধ্যেই ওই সেবিকা করোনায় আক্রান্ত বলে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন তাঁর বাড়ি লকডাউন করে দেয়। চার থেকে পাঁচ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্ত্রীর সহায়তায় তাঁকে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে লকডাউনমুক্ত করা হয়। ভুক্তভোগী সেবিকার মেয়ে ফেসবুকে জানান, তাঁর মায়ের করোনা নেই। এ ছাড়া পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।