করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ঢাকায় যাত্রী আসা বন্ধ হচ্ছে : ওবায়দুল কাদের

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বিমানযোগে ঢাকায় যাত্রী অবতরণ বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ রোববার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কর্মসূচিও তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঠিক করতে রোববার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভা। সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার জনসমাগম পরিহার করে পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের সভার আলোচ্য বিষয় ছিল মুজিববর্ষ নিয়ে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পরিবর্তিত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচির বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সারা বাংলাদেশে জেলা-উপজেলা, মহানগর, এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সভানেত্রীর অনুমোদন নিয়ে, সব জায়গায় নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত আমরা সবাইকে জানিয়েছি।’
করোনাভাইরাসের কারণেই পরিবর্তিত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে যে ভাইরাসটি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, যেটা দেশে দেশে ছড়িয়েছে। এটা এন্ডেমিক থেকে এপিডেমিকে রূপ নিয়েছে। একটা মহামারি আকার ধারণ করেছে। যে কারণে আমাদের দেশেরও উদ্বেগ আছে, উৎকণ্ঠা আছে। আমাদের জনগণের মধ্যে এই নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। কারণ, বাংলাদেশ খুব জনবহুল দেশ। এখানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে এর কী হতে পারে। আজকে জার্মানি, ব্রিটেনের মতো দেশ বাদ যাচ্ছে না, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৪৯টি দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি পরিবর্তিত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
চীন করোনা প্রতিরোধক বার্তা পাঠিয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চীনই একমাত্র কন্ট্রোল করতে পেরেছে এবং তারা কীভাবে কন্ট্রোল করেছে, এই মর্মে একটা চিঠি আমাদের কাছে এসেছে। এই রোগের সংক্রমণ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়, সেটায় সহযোগিতা করবে তারা, এমনই একটি আভাস দিয়ে একটা চিঠি আমাদের দিয়েছে। আমাদের দেশে আমরা এখনো প্রস্তুত। সরকার যেমন প্রস্তুত, আমাদের পার্টিও প্রস্তুত। সতর্কতার অভিযানে আমরা দেশবাসীকে সতর্ক করতে কেন্দ্রীয়ভাবে লিফলেট বিতরণ করছি। আমাদের এখানে এখনো সংক্রমিত হওয়ার উদাহরণ নেই। যারা সংক্রমিত, তারা বিদেশ থেকে এসেছে। এবং বাকি যারা আসছে, তাদের কোয়ারেন্টিনের ব্যপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
স্কুল-কলেজ বন্ধের বিষয়টি সরকারের পাশাপাশি দলও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, গতকাল থেকে কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।
এ সময় মুজিববর্ষের দলের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু জন্ম নিয়েছিলেন, এবারের জন্মশতবার্ষিকী ঘটনাক্রমে সেই একই কাকতালীয় হয়ে গেছে, একই দিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন যে দিনে, সেদিনই শতবার্ষিকী হয়ে গেছে।’
কর্মসূচি
১৭ মার্চ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সব আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল করবেন। এ ছাড়া দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এতিম ও দুস্থদের মধ্যে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ হবে।
দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে অসহায় দুস্থদের মধ্যে খাবার, বস্তু ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবহার্য সামগ্রী বিতরণ করবে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপকমিটি।
দুপুর ১টায় বনানীর কড়াইল বস্তিতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এতিম ও দুস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।
রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু জন্মক্ষণ উপলক্ষে সারা দেশে একযোগে আতশবাজি প্রদর্শনী ও ফানুস উত্তোলন করা হবে।
ঢাকার রবীন্দ্রসরোবর, হাতিরঝিল, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি প্রদর্শনী হবে। এ ছাড়া রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে সাজসজ্জা করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে রাত ৮টার পরে একযোগে সব গণমাধ্যমে প্রচারিত হবে ঘরে বসে দেখার জন্য।