কোরআন অবমাননা : সেফুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ ৪ জুলাই
পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগে অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামস জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বছরের ২৩ নভেম্বর সেফুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপরে আজ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন মামলার বাদী সাক্ষ্যগ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক পার্থপ্রতিম ব্রহ্মচারী সেফুদার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তারপর ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সেফুদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার আরজি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল বাদী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখতে পান, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাপ্রবাসী সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে পবিত্র আল কোরআন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে কথা বলেছেন এবং আল কোরআনকে অবমাননা করছেন। এতে তিনি সমগ্র ইসলামী বিশ্বকে মারাত্মকভাবে আহত করেছেন। লাইভটি ভাইরাল হওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
আরজিতে আরও বলা হয়, আসামি সেফুদা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় লাইভে এসে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও কটূক্তি করেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে সেফাত উল্লাহ পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেন। এ সময় পবিত্র কোরআনের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে ফেসবুক লাইভে এসে সেফাত উল্লাহ বলেন, ‘এটি কোরআন শরিফ ছিল না। এটি একটি বই। এক কবি উপহার হিসেবে আমাকে দিয়েছিল।’
সেফুদার এমন বক্তব্য নিয়ে মামলার বাদী মো. আলীম আল রাজী (জীবন) বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি তদন্ত করতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পারিবারিক জীবনে সেফাত উল্লাহর এক সন্তান রয়েছে। তিনিও অস্ট্রিয়ায় থাকেন। তবে সেফাত উল্লাহর স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। প্রায় ২২ বছর আগে সেফাত উল্লাহ অস্ট্রিয়ায় পাড়ি জমান। সেফাত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চেড়িয়ারা গ্রামে। ২৫ বছর আগে সেফাত উল্লাহর বাবা তাঁকে ত্যাজ্য করেছিলেন বলে জানান স্বজনরা।
সেফাত উল্লাহ সেফুর বড় ভাই শামছুল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, ‘কিশোর বয়সে সেফাতকে আমার বাবা পাবনার পাগলা গারদে দিয়ে আসেন। সেখানে কয়েক মাস তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে মাঝেমধ্যে বাড়িতে ফোন করে। ফোন করেই আমাদের গালিগালাজ করে।’
সেফাত উল্লাহর বাবা মৃত হাজি আলী আকবর তিন বিয়ে করেন। ফলে সব ঘর মিলে সেফাত উল্লাহর ভাইবোন ১৫ জনেরও বেশি। সেফাতের আপন ভাইবোন আটজন। তবে কারো সঙ্গেই সুসম্পর্ক নেই তাঁর।
সেফাত উল্লাহর চাচাতো ভাই রেদোয়ান হোসেন সেন্টুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সেফাত পরিবারের অবাধ্য হয়ে চলত। পরিবারের কাছে জেনেছি, তাঁকে একবার পাগলা গারদ ও জেলখানায় রাখা হয়েছিল। তাঁর বাবা হাজি আলী আকবর তাঁকে কোনো সম্পত্তি দেননি। ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার সময় দেশে আসেননি তিনি। পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই।’