ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ, রাতদিন পাহারা

দাম অনেক বেশি হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। চোরের ভয়ে রাত জেগে পেঁয়াজক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন পেঁয়াজচাষিরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশি দাম পাওয়ার আশায় দুই মাস আগে জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ রোপণ করেছিলেন এই জেলার অনেক কৃষক। পেঁয়াজের আকার বড় হয়েছে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার ভালো হওয়ায় এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজক্ষেতে চোরের দল হানা দিতে শুরু করেছে। তাই চুরি হওয়ার ভয়ে রাত জেগে পেঁয়াজক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা। গত মৌসুমে পেঁয়াজের দর ভালো না পেলেও এবার বাজারদর বেশি হওয়ায় লাভের আশা করছেন তাঁরা।
কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। গত বছর পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি হয়েছে। এবার পেঁয়াজের বাজার ভালো। আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই ফলনও ভালো হবে বলে আশা তাঁদের। শেষ পর্যন্ত যদি বাজার এমন থাকে, তাহলে লাভের মুখ দেখবেন তাঁরা। তবে এরই মধ্যে পেঁয়াজের জমিতে চোরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে।
সদর উপজেলার হায়াতমোড় এলাকার পেঁয়াজচাষি আমিরুল হক জানান, আগাম পেঁয়াজ লাগালে দাম বেশি পাওয়া যায়। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। এখন পেঁয়াজ অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এবার পেঁয়াজের বাজারদর ভালো থাকায় লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে, বাজারে ভালো দাম থাকায় চোরের উপদ্রব দিন দিনই বেড়ে গেছে। হয়তো এক জমি জোগান চলছে, সে সময় আরেক জমি থেকে চোর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকরা বেশ চিন্তিত।
হায়াতমোড় এলাকার আরেক চাষি রুবেল বলেন, ‘আমি এবার দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। জমিতে পাহারা দেওয়ার কোনো ফাঁকে গত বুধবার রাতে আমার ও আমার পাশের জমি থেকে চোর পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে।’
চাষি মিনহাজুল আতিক বলেন, ‘গত বছর আমি চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছিল ৩০-৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু লাভ হয়নি। দাম কম ছিল। গত বছর দাম ছিল ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি। ওই ভয়ে এবার মাত্র ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। ১০ কাঠা পেঁয়াজে আমার আবাদ খরচ হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু এবার পেঁয়াজের যে দাম আছে, সেটা যদি থাকে তাতেই ভালো লাভ হবে বলে আশা করছি।’
আরেক পেঁয়াজচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বছর পেঁয়াজের তেমন দাম পাননি। কোনো কোনো বছর খরচই ওঠেনি। কিন্তু এবার যে বাজারদর চলছে, এমন থাকলে লাভবান হবো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের উপযোগী। এ বছর জেলায় দুই হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আগাম জাতের পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়েছে ৪০৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাঁচ হাজার ২৭৮ টন ফলন আশা করা হচ্ছে। গতবার ভালো দাম না পেলেও এবার কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষি কর্মকর্তারা।