খুলনায় বিএনপির সমাবেশে দফায় দফায় লাঠিচার্জ, মঞ্জুসহ আহত ২৫

খুলনায় বিএনপির ডাকা সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। আজ সোমবার কেডিঘোষ রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার অনুমতির দাবিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পুলিশ এই স্থানে কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি এবং পুরা এলাকা কর্ডন করে রাখে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঘটনাস্থলে এলে দলীয় নেতাকর্মীরা জড় হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে স্লোগান দিতে শুরু করে। এ সময় পুলিশ দফায় দফায় লাঠিচাজ এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, চার সাংবাদিক, এক পুলিশসহ ২৫ জন আহত হয়। এ সময় আটক করা হয় আটজনকে। পরে পুলিশ বিএনপির অফিস অবরুদ্ধ করে রাখে।
পুলিশের লাঠিচার্জে দৈনিক ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক দেব্রবতসহ পাঁচজন আহত হয়। প্রায় ১০ মিনিটি লাঠিচার্জ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর পুলিশ পিছু হটে।
পরে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট সমাবেশ চলা পর পুলিশ দ্বিতীয় দফা লাঠিচার্জ করে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। পুলিশের বেধড়ক লাঠিচাজে নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাংবাদিকসহ মোট ২৫ জন আহত হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এলাকাটি তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ দুই রাউন্ড টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিএনপির নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন অলিগলি থেকে আটজনকে আটক করে।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার অনুমতির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা খুলনায় সমাবেশের ঘোষণা দেই। কিন্তু পুলিশ এসে আমাদের সমাবেশস্থল দখল করে রাখে। পরে চারদিক থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী চলে এলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। আমরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শুরু করি। পরে দ্বিতীয় দফায় শক্তি বৃদ্ধি করে পুলিশ দুপুর সোয়া ১২টায় এসে আবার হামলা করে, নির্বিচারে বেধরক পেটাতে শুরু করে। এ সময় অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। ওসি মামুন আমাকে গুলি করার হুমকি দেয়। আমরা অনড় থাকায় তৃতীয় দফায় ঘুরে এসে পুলিশ আবার হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের হামলায় আমাদের অর্ধশত নেতাকর্মী মারাত্মক জখম ও আহত হয়। আমরা এখনও পুরো তালিকা পাইনি। কারণ অনেক নেতাকর্মী হাসপাতালে, ক্লিনিকে চিকিৎিসাধীন। আমাদের বিশ জনের মতো আহত নেতাকর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা রাষ্ট্রীয় পুলিশের বর্বরোচিত ও প্রতিহিংসাপরায়ণ এ হামলার নিন্দা জানাই। এটা আমাদের ওপর রাষ্ট্রীয় পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণ।’
নজরুল ইসলাম মঞ্জু আরও বলেন, ‘গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু খুলনার পুলিশ কমিশনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে, ভায়োলেট করে; আমাদের ওপর হামলা করেছে। এই কমিশনার কাউকে খুশি করার জন্য বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে খুলনায় এসেছেন। তাই আমাদের ওপর বারবার হামলা করছেন। পাঁচ মাস আগে হামলা করে বাবুল কাজীকে হামলাকারী দারোগা কামরুল আজ আমার ওপর হামলা করেছে। এই বাবুল কাজী হত্যার দায়ে আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে বাধ্য হব।’
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি বলেন, ‘আজকের এ ঘটনা প্রমাণ করে, এ সরকার ফ্যাসিস্ট। এ সরকার চায় না বেগম জিয়া মুক্ত হোক, তার সুচিকিৎসা হোক। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া। তাই এটি একটি মানবিক কর্মসূচি ছিল। খুলনার পুলিশ, বিশেষ করে কমিশনার, ওসি ও কামরুল যে আচরণ করল এটি বর্ণনা করার ভাষা আমাদের নাই। এটি অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং আমাদের বিরুদ্ধে পৈশাচিক আচরণ। এ পৈশাচিক হামলা যারা করেছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব, এদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব ইনশাআল্লাহ।’
এ সময় খুলনাবাসীকে বিএনপির পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি। আরও বলেন, ‘আমরা হামলা, মিথ্যা মামলা, গুলি, বেয়নেট কোনো কিছু ভয় পাই না। নেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আছি, পরবর্তী কর্মসূচিতেও রাজপথে থাকব ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে, এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূইয়া আজ বিকেলে এনটিভিকে অনলাইনকে বলেন, ‘ইটপাটকেলের আঘাতে আমাদের ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। অনুমতি না থাকায় সড়কের উপর কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
আজ রাতে এ ব্যাপারে আবার মোবাইলে কল দিলে এবং ক্ষুদেবার্তা দিলেও তিনি কল ধরেননি বা ক্ষুদেবার্তার কোনো উত্তর দেননি।
এদিকে, খুলনা জোন সহকারী পুলিশ কমিশনার বায়জীদ ইবনে আকবার রাতে এনটিভি অনলাইনকে মোবাইলে জানান, তাদের বক্তব্য দেওয়ার নির্দেশনা নাই। তিনি খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
তবে কয়েক দফা থানায় গিয়ে এবং মোবাইল করলে সহকারী পুলিশ কমিশনার বায়জীদ ইবনে আকবার কল রিসিভ করেননি।