গৃহকর্ত্রীর ‘নির্যাতনে’ শিশু গৃহকর্মী হাসপাতালে
শিশু চাঁদনী ঢাকায় গৃহকর্মী কাজ করতে গিয়ে নয় মাস পর শরীরে দগদগে ঘা নিয়ে কুষ্টিয়ায় ফিরেছে। সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় ঠাঁই হয়েছে শিশুটির। একই এলাকার ঢাকায় বসবাস করা গৃহকর্ত্রী নেছার খাতুনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার।
শিশু চাঁদনী জেলার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার তমিজ উদ্দিন তোজার মেয়ে।
শিশুটির পারিবারিক সূত্র জানায়, একই গ্রামের মাসুদুজ্জামান রান্টুর মেয়ে নেছার খাতুন ঢাকায় থাকেন। প্রায় নয় মাস আগে তিনি মাসিক এক হাজার টাকা বেতন ও খাওয়া-পরার শর্তে ঢাকার বাসায় কাজের জন্য শিশু চাঁদনীকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কদিন পর থেকেই তারা চাঁদনীর পরিবারের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শিশু চাঁদনী সাংবাদিকদের জানায়, ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চার দিন পর থেকেই তার ওপর গৃহকর্ত্রী নেছার খাতুনের নির্যাতন শুরু হয়। থালা-বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় কাঁচা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ তাকে করতে হতো। একটু কিছু হলেই কথায় কথায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো। লোহার খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। রাতে মারপিটের পর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখা হতো।
চাঁদনীর বাবা তমিজউদ্দিন তোজা বলেন, ‘অনেকটা জোর করেই নেছার খাতুন চাঁদনীকে ঢাকায় নিয়ে যান। মাসে মাসে মেয়ের পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা থাকলেও একটা পয়সাও দেননি তিনি। গত নয় মাস আমাদের সঙ্গে চাঁদনীর যোগাযোগ করতে দেননি। অবশেষে গ্রামবাসীর চাপে গতকাল বুধবার চাঁদনীকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।’
খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামীম মাহমুদ বলেন, ‘আগে থেকেই মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ধারাবাহিক নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবেও সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
তবে গৃহকর্ত্রী নেছারের বাবা মাসুদুজ্জামান রান্টু দাবি করেন, ‘শিশুটিকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে গ্রাম্য চক্রান্ত। শিশুটির শরীরে আগে থেকে ঘা ছিল।’
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্যাতনের ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে এলাকার একটি গ্রুপ বিষয়টি মীমাংসার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।