গ্রিসে রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা

ইউরোপের দেশ গ্রিসে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার এক রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের আত্তিকা নামক একটি এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত রেমিট্যান্স যোদ্ধার নাম নাজমুল হোসেন। তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের লালাপুর গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাজমুল ছিলেন সবার বড়।
স্বজনদের দাবি, টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নাজমুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে নাজমুলের মৃত্যুর খবরে তাঁর বাড়িতে চলছে স্বজনদের মধ্যে শোক। নাজমুলের লাশ দেশে ফেরাতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে তারা।
স্বজনরা জানায়, নাজমুল পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় ১৩ বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমান। ইরান, তুরস্ক হয়ে প্রায় আট বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করছিলেন তিনি। চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় আট মাস আগে গ্রিসের নাগরিক হিসেবে বৈধতাও পেয়েছিলেন নাজমুল।
সম্প্রতি একই এলাকার মোস্তফাপুর গ্রামের মফিজুর রহমান গ্রিসে যান। সেখানে গিয়ে নাজমুলের সঙ্গে থাকেন। তাঁরা একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
নাজমুলের পরিবারের লোকজন জানান, অনেক দিন ধরে কোনো যোগাযোগ করছিলেন না নাজমুল। পরে তাঁরা খবর পান গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে নাজমুলকে একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে স্থানীয় পুলিশ আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নাজমুল মারা যান।
নাজমুলের পরিবারের লোকজনের দাবি, মফিজুর নাজমুলকে কোনো কিছু খাইয়ে মৃত ভেবে দূরে কোথায় ফেলে আসে। পরে সেখান থেকে পুলিশ নাজমুলকে উদ্ধার করে হাসপাতাল ভর্তি করে। এমন একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে গেছেন নাজমুল।
এ ব্যাপারে নিহতের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল সে দেশে এসে বিয়ে করবে। এ জন্য আমরা পাত্রীও খুঁজছিলাম। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না ঘাতক।’ এসব বলেই বারবার মূর্চ্ছা যান তিনি।
নিহতের ভাই এনামুল হোসেন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন নাজমুল। ভিডিওতে মফিজুলের কথাই বারবার বলেছেন তিনি।
এনামুল আরো বলেন, প্রবাস জীবনের উপার্জিত টাকাপয়সা জমা ছিল নাজমুলের কাছে। কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন তাঁর কাছে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা আছে। তাঁর স্বপ্ন ছিল ভাইকে বিদেশ পাঠাবেন, জায়গা কিনে ঘর বানাবেন এবং এ বছরই দেশে এসে বিয়ে করবেন। তাঁর ওই টাকা আত্মসাৎ করতেই তাঁকে হত্যা করে টাকা নিয়ে পালিয়েছেন মফিজুর।’ একই অভিযোগ করেন নাজমুলের মা। তাঁরা নাজমুলের লাশ দ্রুত দেশে এনে শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাশ দেশে আনতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।