চিড়িয়াখানায় ক্ষুধার্ত কুকুরের হানা, ৪ হরিণ সাবাড়!

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় খাবার না পেয়ে একদল ক্ষুধার্ত কুকুর রাজশাহীর একটি চিড়িয়াখানায় হানা দিয়ে চারটি হরিণ খেয়ে ফেলেছে।
আজ শুক্রবার ভোরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় এ ঘটনা ঘটে। পাঁচটি ক্ষুধার্ত কুকুর ঢুকে তিনটি শাবকসহ মোট চারটি জীবন্ত হরিণ খেয়ে ফেলে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে সকালেই হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আজ বিকেলে চিড়িয়াখানায় সরেজমিনে গেলে সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামকে পাওয়া যায়। তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
পরে হরিণের শেডের পাশে পাওয়া যায় মধু নামের একজন পশুর পরিচর্যাকারীকে। হরিণের শেডে কুকুর ঢুকেছিল কোন দিক দিয়ে? জানতে চাইলে মধু দেখালেন, পূর্ব দিকের বেড়ার অংশ।
এ প্রতিবেদকের সামনেই কেঁদে ফেলে মধু বললেন, ‘আমার কোনো দোষ নেই।’
মধুর সহজ স্বীকারোক্তির পর অবশ্য সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামও স্বীকার করেন বিষয়টি।
সুপারভাইজার বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। কুকুরের দল ঢোকার সময় শেডে মোট হরিণ ছিল ৭৫টি। এখন হরিণের সংখ্যা ৭১টি। কুকুরের পেটে যাওয়া চারটি হরিণের তিনটিই বাচ্চা। একটি তাদের মা। হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ শেডের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়েছে।’
বেশ কিছু জমি নিয়ে হরিণের শেড করা হয়েছে চিড়িয়াখানায়। এর ভেতর টিন দিয়ে দুটি ঘর রয়েছে। হরিণরা সেখানে পানি পান করে এবং খাবার খায়। ছায়ায় বিশ্রাম করে। বাকি অংশটুকু হরিণের বিচরণের জন্য ফাঁকা পড়ে আছে। চারপাশে আছে লোহা এবং কাঁটাতারের বেড়া। বিকেলে সবগুলো হরিণ ফাঁকা এক জায়গায় বসেছিল।
এ ঘটনার পরও চিড়িয়াখানায় দ্বিতীয় গেটের বাম পাশে থাকা পুকুরপাড়ে শুয়ে ছিল একটি কুকুর। চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মচারীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার কারণেই শেডের ভেতর চারটি হরিণ খেয়ে ফেলেছে কুকুরগুলো।
এ নিয়ে কথা বলতে চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে কয়েক দফা চেষ্টা করা হলেও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীন ফোন ধরেননি।
শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা।’
সমর পাল বলেন, ‘রাত ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানার পুকুরে কাজ চলেছে। লোকজন ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবার সংকট। তাই পাঁচটি নেড়ি কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে পড়েছিল। বেড়া থাকলেও কুকুরগুলো হরিণের শেডে ঢুকতে পেরেছিল।’
সমর কুমার পাল আরো বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো প্রথমে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছিল। তাঁকে বাঁচাতে গিয়েছিল মা হরিণটি। তখন সবগুলোকেই আক্রমণ করেছে কুকুরগুলো। সবগুলো হরিণের দেহের অংশ খেয়ে ফেলেছিল। ভোরে চিড়িয়াখানার কর্মীরা দেখেন হরিণের শেডে পাঁচটি কুকুর। চারটি হরিণের ক্ষতবিক্ষত দেহও পড়েছিল। পরে কুকুরগুলোকে বের করে দেওয়া হয়। আর হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ককে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিবেদন দেবেন। এরপর এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে, নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’