জনস্বার্থে কাজ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতির সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে জনস্বার্থে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনস্বার্থে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে তবে জাতির সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে।’
জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কার্যক্রমের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো দরিদ্র মানুষের পাশে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দাঁড়াতে পারে, তবে, দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
রাষ্ট্রপতি ১০ দিনব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের ষষ্ঠ দিনে তেজগাঁও প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনদর্শন ও চিন্তা-ভাবনার কথা যথাযথভাবে প্রচারের কথাও উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি সম্মানিত বিশেষ অতিথি এবং বিশিষ্ট লেখিকা সেলিনা হোসেন মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী রাশিদা খানম এবং নেপালের প্রেসিডেন্টের কন্যা উষা কিরণ ভান্ডারি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যে উদ্যোগী হতে রাষ্ট্রপতি সবাইকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে ইতিহাস এসে পড়ে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্কুলজীবন থেকেই জনকল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ বা আনন্দ সম্পর্কে খুব একটা চিন্তা করতেন না। ছোটোবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। কখনো নিজের এবং পরিবারের গন্ডির মধ্যে বাঁধা পড়েননি।
আবদুল হামিদ বলেন, আজীবন বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু স্থান করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। দেশবাসীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা এবং আস্থা ছিল অবিচল এবং সবশেষে তিনি বাঙালির ভালোবাসার বিনিময়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ১৯৩৮ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় ঘটে এবং প্রথম পরিচয়েই তিনি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করার সুযোগ নেই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল নামই নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, বঙ্গবন্ধু ততদিন অবধি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সঙ্গে মিল রেখে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন সরকার তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক উদযাপনে অংশ নেওয়ায় রাষ্ট্রপতি নেপালর প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘নেপালের মাননীয় প্রেসিডেন্টকে তাঁর মূল্যবান বক্তৃতার জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, যা দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রতিফলিত করেছে।’
রাষ্ট্রপতি হামিদ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রতি নেপালের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি জনগণ যে অব্যাহত নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন দান করেছিলেন তা গভীর প্রশংসায় স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ায় দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জল, স্থল ও আকাশে বাংলাদেশের একটি দৃঢ় অবস্থান চেয়েছিলেন যাতে বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলায়’ রূপান্তরিত করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর যোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্ন গড়ায় দেশ গঠনের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে কার্যক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।
তারা কোভিড-১৯ মহামারিজনিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।