জেলায় জেলায় বাড়ছে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার সংখ্যা

করোনাভাইরাসে পুরো দুনিয়া এখন আতঙ্কে। সেই ভয়াবহতার ঢেউ বাংলাদেশেও লেগেছে। দিন যাচ্ছে আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রবাসীরা। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে আসছেন, সেইসঙ্গে তাদের মাধ্যমে এ ভাইরাস সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে দিন দিন। তাই প্রবাসীরা দেশে আসলেই ১০ দিনের ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জেলা প্রতিনিধি ও প্রতিবেদকের পাঠানো সংবাদ-
নাটোর থেকে হালিম খান : নতুন পাঁচজনসহ চীন, ইতালি, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নাটোর জেলার মোট ২০ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে আসা লালপুর উপজেলার সালামপুর গ্রামের ট্রাকচালক রবিউল আওয়াল হাসান সর্দি-জ্বর নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। কিন্তু তাঁকেও ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে গ্রাম ও শহরতলীর বিভিন্ন চায়ের দোকানে টিভি চালিয়ে জনসমাগম না করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মানছে না কেউ। অন্যদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে দুপুরে নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছেন সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ।
সুনামগঞ্জ থেকে দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী : গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে আরো ১২ প্রবাসীকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে গত চার দিনে সুনামগঞ্জে ইতালি, স্পেন ও ওমান, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২৬ জন প্রবাসীকে এখন পর্যন্ত ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ।
আজ বুধবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১২ জনের ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার থাকার খবর নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শামছুদ্দিন জানান, নতুন করে যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশ থেকে আসা ১২ জনকে নতুন করে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত চার দিনে সুনামগঞ্জে মোট ২৬ জন ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকতে বলা হয়েছে। তাদের সবাইকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেনী থেকে ওছমান হারুন মাহমুদ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ফেনীতে বিদেশ থেকে আসা ৫৪ জন এবং তাদের পরিবার মিলিয়ে মোট ১৬৬ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে।
সকালে ফেনী সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা সবাইকে নীবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকদের পর্যবেক্ষণ করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। এর বাইরে জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেখাশুনা করার জন্য।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৩০ বেড, ফেনী ট্রমা সেন্টারে ৩০ বেড, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ বেডসহ পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ বেড করে ২৫ বেড; মোট ১০৫ বেডের আইসোলেশন কর্নার করা হয়েছে।
চাঁদপুর থেকে হাবিবুর রহমান খান : সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতে চাঁদপুরে বিদেশ ফেরত গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ আজ দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিদেশ থেকে ফেরত ছয়জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া, এখন পর্যন্ত চাঁদপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিরোধমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ ।
মেহেরপুর থেকে রেজ আন উল বাসার : করোনাভাইরাস সতর্কতায় মেহেরপুরে ৩০ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনায় বিদেশফেরত এসব মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে কারো শরীরে করোনা উপসর্গ নেই।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জেলায় মোট ৩০ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় দুইজন, গাংনী উপজেলায় ১৮ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ১০ জন। যারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘বিদেশ থেকে আগতদের ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ভাইরাস আছে কিনা তা আমরা জানি না। যদি কোনো জীবাণু থেকে থাকে তাহলে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা প্রশাসনের সহায়তায় কোয়ারেন্টিনে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।’
রাজবাড়ী থেকে আহসান হাবীব : গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীতে নতুন করে আরো ২৯ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ জন।
এই তথ্য জানিয়েছেন রাজবাড়ীর সির্ভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, এ নিয়ে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তবে জেলায় করোনাভাইরাসের কোনো রোগী নেই।
নেত্রকোনা থেকে ভজন দাস : ইতালি, চীন, জর্ডান, মালোশিয়া, ওমান ও বাহরাইন ফেরত নয়জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রেখেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সেইসঙ্গে তাদের বাড়ির আলাদা কক্ষে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জেলার সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল জানান, জেলা সদরসহ মদন, দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় বিদেশফেরত মোট নয়জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরো জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজ রাখছেন। ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা সবাই ভালো আছেন। তবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের কোনো উপকরণ বা কিড এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জেলা পর্যায়ে কিড আসতে দেরি হবে। বিদেশ ফেরত কারো মধ্যে এই ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরকে জানিয়ে দেওয়া হবে তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
গোপালগঞ্জ থেকে মাহবুব হোসেন সারমাত : গোপালগঞ্জে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রয়েছেন ৫২ জন। গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, মুকসুদপুরে ও কাশিয়ানী উপজেলায় ৫২ জন নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলায় এখনো কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ।
সিভিল সার্জন আরো জানান, স্বাস্থ্যকর্মীরা সব সময়ই তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
গোপালগঞ্জে জেনারেল হাসপাতালের করোনাভাইরাস আইসোলেশন ওয়ার্ডে কেউ ভর্তি নেই বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক। তিনি জানান, এখনো গোপালগঞ্জে এ রোগ শনাক্ত হয়নি।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা ৫০ জন ইতালি, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গোপালগঞ্জে এসেছেন। বাকি দুইজন ঢাকা যাতায়াত করায় তাদের ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এরা সবাই সুস্থ আছেন। তারা এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে তিনি জানান।
নরসিংদী থেকে বিশ্বজিৎ সাহা : নরসিংদীতে করোনাভাইরাস সন্দেহে বিদেশফেরত আরো ২৪ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলাতে ৪৪ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হলো। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।
‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ নরসিংদী সদর উপজেলায় ১১ জন, পলাশ উপজেলায় তিনজন, শিবপুর উপজেলায় ১৭ জন, মনোহরদী উপজেলায় দুইজন, বেলাব উপজেলায় একজন ও রায়পুরা উপজেলায় ১০ জন। এরা সবাই ইতালি, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাই ফেরত। ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ সাতজন নারী রয়েছে। তবে নতুন ২৪ জনের অধিকাংশই ইতালি ফেরত। তাদের সবাইকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, নিজ নিজ বাড়িতে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।
এদিকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে ১০০ শয্যার ব্যবস্থা রাখার সুবিধা আছে। একইসঙ্গে নরসিংদীর প্রধান দুটো চিকিৎসাকেন্দ্র জেলা ও সদর হাসপাতালসহ সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলাদা আইসোলেশন ইউনিট রাখা হয়েছে। তবে জেলার দুটো প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র জেলা ও সদর হাসপাতালসহ কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটে এখন পর্যন্ত কেউ ভর্তি হননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শিহাব উদ্দিন বিপু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইতালি ও সৌদিফেরত ১৪ প্রবাসীকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই।
এদিকে এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভাইরাস আক্রান্তের প্রস্তুতি হিসেবে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে কোয়ারেন্টিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত অথবা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের সেখানে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সিভিল সার্জন মো. শাহ আলম বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা হোম কোয়ারেন্টিনে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।’
মানিকগঞ্জ থেকে আহমেদ সাব্বির সোহেল : মানিকগঞ্জে বিদেশ ফেরত ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা ব্যক্তির সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫১ জনে। আজ বুধবার নতুন করে ৫১ জন যুক্ত হওয়ায় ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ জেলায় বর্তমান মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৫৯ জনে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট বিদেশ ফেরত ৪৪০ জন ব্যক্তিকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ না পাওয়ায় আজকের ১৯ জনসহ মোট ৮১ জনকে পর্যবেক্ষণ থেকে মুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘বিদেশফেরত কারো বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি ধরা পড়লে অর্থ জরিমানাসহ হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা হবে।’
নারায়ণগঞ্জে থেকে নাফিস আশরাফ : জেলায় ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলছে। এক চীনা নাগরিকসহ জেলায় ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকা ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৩৮ জন। আজ বুধবার দুপুরে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এ তথ্য দিয়েছেন।
মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ছিল ৩৪ জন। এদের মধ্যে ৩০ জনই বিদেশফেরত। তাদের একজন চীনা নাগরিক। পরে আরো চারজন বেড়ে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হয় ৩৮ জন।
তবে নারায়ণগঞ্জে নতুন করে করোনা আক্রান্তের খবর এখনো পাওয়া যায়নি বলে সিভিল সার্জন দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘সবাই হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। এখন পর্যন্ত কাউকেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে রাখা হয়নি। তারা সবাই বাড়িতে রয়েছেন। প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাদের বাইরে ঘোরাফেরা না করে বাসায় অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট থেকে মঈনুল হক বুলবুল : এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ২৮৯ ব্যক্তিকে। এদের মধ্যে প্রবাসফেরত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ মানুষ আছেন।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানিয়েছেন, সিলেট জেলায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮৯ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশনে আছেন লন্ডন ফেরত একজন বয়স্ক মহিলা।
সিভিল সার্জন জানান, হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে থাকা অপর দুই ব্যক্তি সুস্থ থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকবেন।
সাতক্ষীরায় থেকে সুভাষ চৌধুরী : করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত সাতক্ষীরার আরও ২৪ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাদের এই কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়। এ নিয়ে গত তিন দিনে বিদেশফেরত সাতক্ষীরার ৩৭ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১০ জন, আশাশুনি উপজেলায় ছয়জন, কালিগঞ্জ উপজেলায় আটজন, দেবহাটা উপজেলায় দুইজন ও শ্যামনগর উপজেলায় ১১ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরায় বিদেশফেরত মোট ৩৭ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ নেওয়া হয়েছে। এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এরা সবাই ভারত, ইতালি, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন এমন লোকের সংখ্যা বেশি। এসব ব্যক্তিদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
পিরোজপুর থেকে রশিদ আল মুনান : জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিদেশফেরত ৩২ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জন মঠবাড়িয়ার, পাঁচজন ভাণ্ডারিয়ার, তিনজনের বাড়ি ইন্দুরকানী উপজেলায়, চারজনের পিরোজপুর সদর এবং একজনের নেছারাবাদ উপজেলায়।
হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, দুবাই, কাতার, ইটালি এবং ভারত থেকে এসেছেন। আর বিদেশফেরত ব্যক্তিরা যাতে ১৪ দিন ঘরের মধ্যে আলাদা থাকে সেই বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এবং শিক্ষকদের নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিরোজপুরের সিভিল সার্জন।